বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও ধনকুবের ইলন মাস্ক ট্রাম্প প্রশাসনের বিশেষ পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে বিশেষ সরকারি কর্মচারী হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ফেডারেল সরকারের ব্যয় হ্রাস এবং দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত “ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিশিয়েন্সি (ডিওজিই)” নামক একটি নতুন বিভাগে তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছিলেন।
মাস্ক তার পদত্যাগের ঘোষণা দেন বুধবার, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি নতুন খরচ সংক্রান্ত বিল নিয়ে মতবিরোধের পরপরই। এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ দেওয়া এক পোস্টে মাস্ক বলেন, “বিশেষ সরকারি কর্মচারী হিসেবে আমার দায়িত্বের সময় শেষ হয়েছে। অপচয় কমানোর সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমি বিশ্বাস করি ডিওজিই ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হবে এবং এটি গোটা সরকারি কার্যপ্রণালির অংশ হয়ে উঠবে।”
ট্রাম্প প্রশাসনে যোগ দেওয়ার সময় মাস্কের উদ্দেশ্য ছিল ফেডারেল সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় নিয়ন্ত্রণে আনা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে দক্ষতা আনয়ন। তবে সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি বিশাল ব্যয়ের বিল পাসের উদ্যোগ নেন, যা মাস্কের দৃষ্টিতে সরকারের বাজেট ঘাটতি আরও বাড়িয়ে দেবে এবং ডিওজিই বিভাগের কার্যকারিতা নষ্ট করবে।
মাস্ক অভিযোগ করেন, “ডিওজিই-কে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে। প্রশাসনের ভেতরে যারা এই খরচ বিলের সমালোচনা করছে, তাদের দমন করার একটি কৌশল এটি।”
সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাস্ক বলেন, “আমি বিশাল খরচ বিল দেখে হতাশ হয়েছি। সত্যি বলতে, এই বিল শুধু বাজেট ঘাটতিই বাড়ায় না বরং এটি ডিওজিই টিমের নিরলস প্রচেষ্টাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।” তিনি আরও বলেন, “এই পরিস্থিতিতে আমি আর আমার ভূমিকা পালনে আগ্রহী নই।”
ইলন মাস্কের মতে, ডিওজিই বিভাগের কাজ ছিল সরকারি খাতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে এনে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর করে তোলা। কিন্তু সাম্প্রতিক নীতিগত পরিবর্তন ও প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ টানাপড়েন সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১২ নভেম্বর ইলন মাস্ক ও আরেক উদ্যোক্তা বিবেক রামাস্বামী একযোগে ট্রাম্প প্রশাসনে যোগ দেন। তাঁরা ডিওজিই বিভাগে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন এবং স্বচ্ছ ও কার্যকর প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলার জন্য একযোগে কাজ করছিলেন। এই বিভাগের মাধ্যমে সরকারি কর্মকাণ্ডে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে খরচ কমানো এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
মাস্কের পদত্যাগের ফলে এই বিভাগের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও মাস্ক বিশ্বাস করেন, ডিওজিই ভবিষ্যতে আরও পরিণত ও প্রভাবশালী রূপ নেবে, তবে তিনি এও বলেন যে, বর্তমান প্রশাসনের কিছু সিদ্ধান্ত সেই লক্ষ্য পূরণে বড় বাধা তৈরি করছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া ইলন মাস্ক বর্তমানে স্পেসএক্স, টেসলা, নিউরালিঙ্ক এবং এক্স-এর মতো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। প্রশাসন থেকে পদত্যাগের পর তিনি তার ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলোর ওপর আরও বেশি মনোনিবেশ করবেন বলে জানিয়েছেন।
মাস্কের এই পদত্যাগ শুধু ট্রাম্প প্রশাসনের ওপরই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যয় নীতি নিয়েও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেক বিশ্লেষকের মতে, একজন শীর্ষ উদ্যোক্তার এমন প্রকাশ্য বিরোধ ও পদত্যাগ মার্কিন প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ নীতি দ্বন্দ্বকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।
সরকারি ব্যয় হ্রাস এবং দক্ষতা বৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে ইলন মাস্কের এই পদত্যাগ নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মহলে একটি তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা বহন করছে। এখন দেখার বিষয়, ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে এই শূন্যতা পূরণ করে এবং ডিওজিই বিভাগের ভবিষ্যৎ কেমন রূপ নেয়।