বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে, যার প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশ কিছু এলাকায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে, যা আগামী দুই থেকে তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানান, বৃহস্পতিবার সারাদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া আগামী ২-৩ দিনেও এই বৃষ্টি চলবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন তিনি। নিম্নচাপের কারণে দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। একইসাথে চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনায় আগাম সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বলেন, ভোরের দিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়। এর ফলেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি হচ্ছে। আগামীকাল শুক্রবারও এই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। তবে শনিবার থেকে বৃষ্টির প্রবণতা কিছুটা কমে আসতে পারে, বিশেষ করে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে তুলনামূলক কম বৃষ্টি হতে পারে।
নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে ইতিমধ্যেই ঝোড়ো হাওয়া এবং ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে কিছু কিছু এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, যদি কোনো স্থানে ২৪ ঘণ্টায় ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়, তাহলে সেটিকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হিসেবে ধরা হয়। এই ধরনের বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে পাহাড়ধসের ঝুঁকি রয়েছে।
রাজধানী ঢাকাতেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে ঢাকার পূর্বাঞ্চলে এবং নিম্নাঞ্চলে ব্যাপক পানি জমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা নাগরিক দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলবে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, সক্রিয় সঞ্চালনশীল মেঘমালার কারণে বুধবার সকাল ১০টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় ভারী (৪৪-৮৮ মিমি/২৪ ঘণ্টা) থেকে অতি ভারী (৮৮ মিমি/২৪ ঘণ্টার বেশি) বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনুযায়ী সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে ১০ মিলিমিটার হলে সেটি হালকা বৃষ্টি হিসেবে গণ্য হয়। ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার হলে মাঝারি, ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার হলে মাঝারি ধরনের ভারি বৃষ্টি হিসেবে ধরা হয়। ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার হলে ভারি এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি হলে সেটিকে অতি ভারি বৃষ্টি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এই প্রাকৃতিক পরিস্থিতিতে পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারীদের জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে, যেন জরুরি মুহূর্তে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। একইসাথে নগরবাসীদের বৃষ্টির সময় ঘরের বাইরে অপ্রয়োজনে না যাওয়ার এবং বিদ্যুৎ সংযোগ ও খোলা তার থেকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সার্বিকভাবে বলা যায়, নিম্নচাপের কারণে সৃষ্ট এ বৃষ্টিপাত দেশের জন্য একদিকে যেমন কৃষিকাজে সহায়ক হতে পারে, তেমনি পাহাড়ি ও নিম্নাঞ্চলীয় এলাকায় মানুষের জীবন ও সম্পদ হুমকির মুখে ফেলতে পারে। তাই সময়োপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ ও সচেতনতার মাধ্যমে এই দুর্যোগ মোকাবেলায় সবাইকে প্রস্তু
ত থাকতে হবে।