নির্বাচনের মাধ্যমে নয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) মনোনয়নের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ। এরপর বিসিবির অভ্যন্তরীণ নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি বোর্ডের সভাপতির পদেও আসীন হন। তবে সম্প্রতি এনএসসি তাদের দেওয়া সেই মনোনয়ন বাতিল করায় বিসিবিতে তার সব ধরনের দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে ফারুক আহমেদ হারিয়েছেন বিসিবি পরিচালক ও সভাপতি—দুই পদই।
এনএসসির এই মনোনয়ন বাতিলের খবরটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয় আজ রাতে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ফারুক আহমেদকে যে মনোনয়নের মাধ্যমে বিসিবিতে পরিচালক হিসেবে পাঠানো হয়েছিল, তা বাতিল করা হয়েছে। বাংলাদেশের ক্রীড়া আইনে এবং বিসিবির নিজস্ব গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এনএসসি যে কোনো সময় তাদের মনোনয়ন বাতিলের অধিকার রাখে, আর এবার সেই আইনি অধিকারই প্রয়োগ করেছে তারা।
ফারুক আহমেদ বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক পরিচিত মুখ। নব্বইয়ের দশকে জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন, অধিনায়কত্ব করেছেন এবং পরবর্তীকালে নির্বাচক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি বিসিবির সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর তাকে ঘিরে ছিল নানা আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে বোর্ডের অভ্যন্তরীণ কিছু সিদ্ধান্ত এবং ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তার অবস্থান নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন। যদিও অনেকেই বলছেন, হঠাৎ করে মনোনয়ন বাতিলের এই সিদ্ধান্ত শুধুই প্রশাসনিক নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং বোর্ডের ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে দ্বন্দ্ব।
তবে ফারুক আহমেদকে সরিয়ে দেওয়ার পর কে হচ্ছেন তার স্থলাভিষিক্ত, তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি এনএসসি বা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। তবে ক্রীড়া মহলে জোর গুঞ্জন রয়েছে, বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে প্রথম সেঞ্চুরির অধিকারী আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে এই পদে মনোনীত করা হতে পারে। সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার অনেকদিন ধরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে যুক্ত আছেন এবং আইসিসির বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পেও কাজ করেছেন। তার অভিজ্ঞতা ও আন্তর্জাতিক সংযোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছে ক্রীড়া প্রশাসন।
এনএসসির মনোনয়ন বাতিল এবং নতুন করে মনোনয়ন দেওয়ার প্রক্রিয়াটি বিসিবির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক মোড় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ, এর মধ্য দিয়ে বোর্ডে নেতৃত্বের পরিবর্তনের পাশাপাশি ভবিষ্যতের ক্রীড়া নীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। তাছাড়া বোর্ডের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার ভারসাম্য এবং রাজনৈতিক প্রভাব নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।
এখন অপেক্ষা শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণার। নতুন মনোনীত পরিচালক ও সভাপতির হাতে দায়িত্ব যাওয়ার পর বোর্ডের কর্মকাণ্ড কোন দিকে গড়ায়, সেটাই দেখার বিষয়। তবে এ ঘটনাটি আবারও মনে করিয়ে দিল—বাংলাদেশের ক্রীড়া প্রশাসনে মনোনয়নভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্তির পদ্ধতি কতটা নাজুক এবং রাজনৈতিক প্রভাব কতটা ব্যাপক।
সবমিলিয়ে, ফারুক আহমেদকে সরিয়ে দেওয়া এবং নতুন করে একজনকে মনোনয়ন দেওয়ার এই রদবদল বিসিবির জন্য শুধু ব্যক্তিপর্যায়ের পরিবর্তন নয়, বরং এটি হতে পারে বোর্ডের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়।