চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে মঙ্গলবার (২৮ মে) রাতে জাপানের উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই গুরুত্বপূর্ণ সফরে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক (MoU) সই হবে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী। তিনি জানান, এই সফরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে জাপানের কাছে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা চাওয়া। এটি হবে সহজ শর্তে ঋণ আকারে, যাতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো আরও শক্তিশালী করা যায়। জাপান ইতোমধ্যে কিছু অর্থ সহায়তা দেওয়ার সম্মতি প্রকাশ করেছে, তবে সফরের পূর্বে নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রুহুল আলম সিদ্দিকী আরও জানান, প্রধান উপদেষ্টার সফরে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ৭টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
১. প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন: এই প্রকল্পে জাপানের JBIC-এর সঙ্গে একটি ঋণচুক্তি হবে, যা বাংলাদেশের নগর গ্যাস ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা আনবে।
২. বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড): জাপানের প্রতিষ্ঠান ওনডা ও নাকসিসের সঙ্গে দুটি পৃথক ভূমি-সম্পর্কিত সমঝোতা হবে, যা বাংলাদেশের এসইজেড উন্নয়নে সহায়ক হবে।
৩. শিল্প স্থাপন: বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও জাপানি উদ্যোক্তাদের মধ্যে একটি সমঝোতা স্বাক্ষর হবে ব্যাটারি ও সাইকেল কারখানা স্থাপন নিয়ে। এই কারখানা শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
৪. প্রযুক্তি সহযোগিতা: বিডার ওয়ান-স্টপ সার্ভিস (OSS) প্রযুক্তি উন্নয়নে জাইকার সঙ্গে একটি সমঝোতা হবে, যা ব্যবসা পরিচালনায় সময় ও খরচ কমাবে।
৫. মানবসম্পদ উন্নয়ন: দক্ষতা ও ভাষা উন্নয়নের লক্ষ্যে বিএমইটির সঙ্গে দুটি পৃথক সমঝোতা স্বাক্ষর হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জাপানে কাজের সুযোগ বাড়বে।
৬. অর্থনৈতিক সহায়তা: বাজেট সহায়তা বিষয়ে একটি “এক্সচেঞ্জ অব নোটস” স্বাক্ষরিত হবে।
৭. যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন: জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রেলপথকে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে উন্নীত করার বিষয়েও “এক্সচেঞ্জ অব নোটস” সই হবে।
এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে শিল্পায়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অবকাঠামো খাতে এই সমঝোতাগুলো দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
প্রধান উপদেষ্টা ৩১ মে সকালে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে টোকিও থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে ঢাকায় ফিরে আসবেন এবং ওই রাতেই রাজধানীতে অবতরণ করবেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে।
এই সফরকে ঘিরে দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেক। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জাপানের সঙ্গে এই নতুন চুক্তিগুলো বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন কৌশলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হবে।