জুলাই ঐক্য সম্প্রতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অভিযোগ তুলেছে যে, সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’–এর অজুহাতে সচিবালয়ে একটি ‘সিভিল ক্যু’ বা প্রশাসনিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা চলছে। প্ল্যাটফর্মটি বলছে, এই ষড়যন্ত্রের নেতৃত্ব দিচ্ছে ভারতের প্রক্সি হিসেবে বিগত ১৬ বছর ধরে কাজ করে যাওয়া কিছু আমলা ও ম্যাজিস্ট্রেট। তারা দাবি জানিয়েছে, অবিলম্বে ৪৪ জন আমলা এবং ৯৫ জন ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যারা সচিবালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের পথচলায় বাধা সৃষ্টি করছে।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০ মে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা ওই ৪৪ জন আমলা এবং ৯৫ জন ম্যাজিস্ট্রেটের একটি তালিকা প্রকাশ করে। সেই তালিকায় উল্লেখিত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশে ভারতের স্বার্থ রক্ষার কাজ করেছেন এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্রজনতার ওপর গুলি চালানোর সিদ্ধান্তে সম্পৃক্ত ছিলেন। জুলাই ঐক্য এসব কর্মকর্তাকে ৩১ মে’র মধ্যে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর দাবি জানিয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ’কে সামনে এনে আমলারা এখন সচিবালয়কে কেন্দ্র করে একটি সুশৃঙ্খল প্রশাসনিক অভ্যুত্থান ঘটানোর চক্রান্তে লিপ্ত। এটি শুধু অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিকে ব্যর্থ করতে নয়, বরং পুরো “জুলাই বিপ্লব”-এর চেতনাকে ধ্বংস করার একটি পরিকল্পিত প্রয়াস। তারা বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টা এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যেই জুলাইয়ের আন্দোলন হয়েছিল। অথচ আজ আমলারা সেই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যকেই ভণ্ডুল করার চেষ্টা করছে।’
জুলাই ঐক্য মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাবিত সরকারি চাকরি অধ্যাদেশটি সময়োপযোগী এবং নতুন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। তারা হুঁশিয়ার করে দিয়ে জানায়, সরকার যদি এই সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে কিংবা তা বাস্তবায়নে গড়িমসি করে, তাহলে ছাত্রজনতা ফের রাস্তায় নামবে এবং প্রয়োজনে দেশ অচল করে দেবে। এ সময় তারা সাবধান করে বলেন, ‘এই আন্দোলনের মূল ভিত্তি ২ হাজার শহীদের আত্মত্যাগ এবং ৩১ হাজার আহত ছাত্রজনতার সংগ্রাম। সেই রক্তের ঋণ বিস্মৃত হয়ে কেউ যদি বিপ্লবী সরকারকে রুখে দিতে চায়, তাহলে জনগণ তাকে ক্ষমা করবে না।’
প্ল্যাটফর্মটি আরও দাবি করে, আজও কিছু উপদেষ্টার মদদে ওই আমলারা সচিবালয়ের কার্যক্রম স্থবির করে দিচ্ছে এবং চারদিন ধরে সচিবালয় কার্যত জিম্মি করে রেখেছে। তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট—নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের পথে অন্তর্বর্তী সরকারকে বাধাগ্রস্ত করা এবং গণঅভ্যুত্থানের অর্জনকে নস্যাৎ করে দেওয়া।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তির শেষে জুলাই ঐক্য সরকারকে সতর্ক করে বলে, ‘আমলাতন্ত্রের গোপন ষড়যন্ত্রে যদি “জুলাই স্পিরিট” নষ্ট হয়, তাহলে এর দায়ভার নিতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টাকে। আমরা চাই, দেশ পরিচালনায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনগণের বিজয় নিশ্চিত হোক। আমলাতান্ত্রিক চক্রান্ত রুখে দিয়ে নতুন বাংলাদেশের পথে এগিয়ে যাক দেশ।’
এভাবেই জুলাই ঐক্য তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে প্রশাসনিক স্তরে গড়ে ওঠা গোপন প্রতিরোধ ও ষড়যন্ত্রকে প্রকাশ্যে তুলে ধরেছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।