আগামীকাল মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫, সচিবালয়ে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। সোমবার রাতে এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবালয় নিরাপত্তা শাখার উপসচিব আবদুল্যাহ আল জাবেদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অনিবার্য কারণে মঙ্গলবার সচিবালয়ে সব ধরনের দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ থাকবে।’
এই নির্দেশনা এসেছে এমন এক সময়ে, যখন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আজ ছিল এই আন্দোলনের তৃতীয় দিন। সকাল থেকেই সচিবালয়ের ভেতরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনকারী কর্মচারীরা সচিবালয়ের সব প্রবেশপথ বন্ধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এতে স্বাভাবিক দাপ্তরিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে এবং সচিবালয়ের ভেতরে ও বাইরে যান চলাচলেও প্রভাব পড়ে।
বিক্ষোভরত কর্মচারীদের দাবি, সম্প্রতি প্রণীত সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর কিছু ধারা চাকরিজীবীদের স্বার্থবিরোধী। তারা মনে করেন, এই অধ্যাদেশ কার্যকর হলে চাকরিজীবীদের চাকরি ও আর্থিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। বিশেষ করে পদোন্নতি, বদলি ও অবসর সংক্রান্ত বিষয়গুলো নতুনভাবে নির্ধারিত হওয়ায় কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে ‘বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম’ নামক সংগঠন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারা শুধু ঢাকায় নয়, সারাদেশের সরকারি অফিসের কর্মচারীদেরও একাত্মতা প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে। তারা আগামীকাল মঙ্গলবার পুনরায় বিক্ষোভ ও মিছিলের ঘোষণা দিয়েছে এবং দেশব্যাপী কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছে।
অন্যদিকে সচিবালয়ে দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে অনেকের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ এটিকে প্রশাসনিক নিরাপত্তার স্বার্থে জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ মনে করছেন, এটি আন্দোলন দমন করার একটি কৌশল হতে পারে। তবে প্রশাসন এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
সরকারি চাকরিজীবীদের এই চলমান আন্দোলন প্রশাসনের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে কিনা, কিংবা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান আসবে কিনা, তা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে সচিবালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম যাতে বিঘ্নিত না হয়, সে বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।
এই আন্দোলনের ফলে সাধারণ মানুষ যারা সচিবালয়ে প্রয়োজনীয় কাজের জন্য আসেন, তারাও পড়েছেন বিপাকে। দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হওয়ায় আগামীকাল কেউই সচিবালয়ে ঢুকতে পারবেন না, এমনকি পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বা সাক্ষাতের সুযোগও নাও মিলতে পারে।
সব মিলিয়ে সচিবালয় এখন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নির্ভর করছে আগামী দিনের কর্মসূচি ও প্রশাসনের পদক্ষেপের ওপর। সকলের প্রত্যাশা, আলোচনার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য সমাধান দ্রুতই বেরিয়ে আসবে।