বাংলাদেশ বনাম সিঙ্গাপুরের বহুল প্রতীক্ষিত প্রীতি ফুটবল ম্যাচের টিকিট বিক্রিকে ঘিরে শুরু থেকেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাফুফে (বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন) এই ম্যাচের জন্য অনলাইনে টিকিট বিক্রির দায়িত্ব দেয় ‘টিকিফাইড ডটকম’ নামক একটি ওয়েবসাইটকে। অনলাইনে দর্শকদের সহজে টিকিট কেনার সুযোগ করে দিতে গিয়ে উল্টো পুরো টিকিট ব্যবস্থাপনাতেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বসে তারা।
ঘোষণা অনুযায়ী, গত ২১ মে দুপুর ১২টা থেকে টিকিফাই ওয়েবসাইটে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে রাতে ৮টায় নেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে বহু ফুটবলপ্রেমী ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেও টিকিট পাননি। কেউ কেউ আবার সাইটেই ঢুকতে পারেননি, আর যারা ঢুকতে পেরেছেন, তারাও প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করেও টিকিট কিনতে ব্যর্থ হন। এই পরিস্থিতি সাধারণ দর্শকদের মধ্যে অসন্তোষ, বিভ্রান্তি এবং সন্দেহের জন্ম দেয়।
এ পরিস্থিতিতে সাইবার নিরাপত্তা সংগঠন ‘সাইবার ৭১’ জানায়, কালোবাজারে টিকিট বিক্রির চেষ্টা করতে গিয়েই টিকিফাই একটি সাইবার হামলার শিকার হয়। তারা দাবি করে, ৯ হাজার ব্যবহারকারী সাইটে প্রবেশের আগেই প্রায় ১৭ হাজার টিকিট বিক্রি হয়ে যায়, যা পুরো ব্যবস্থাপনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যদিও টিকিফাইয়ের কর্মকর্তারা একসঙ্গে বহু দর্শকের চাপ সামাল দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন, বাস্তবে তারা চরমভাবে ব্যর্থ হন।
টিকিফাইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ইফতিখার ইফতি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে সঠিকভাবে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। টিকিট ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা বাফুফের কম্পিটিশন কমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেক ফুটবলার গোলাম গাউস জানান, প্রাথমিক সমস্যা কেটে গেছে এবং বাফুফের ফেসবুক পেজে টিকিট বিক্রির সময়সূচি জানিয়ে দেওয়া হবে।
তবে গাউস আরও বলেন, ‘পেছনের ব্যাপারগুলো নিয়ে আমরা আর কথা বলতে চাই না, বরং সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।’ অপরদিকে, কম্পিটিশন কমিটির আরেক সদস্য তাজওয়ার আউয়াল দাবি করেন, ওয়েবসাইটে হামলার পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বাফুফের সভাপতি তাবিথ আউয়াল পুরো ঘটনায় দায় স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘বাফুফে সব সময় নতুন কিছু করার চেষ্টা করে। প্রথমবার ভুল-ত্রুটি হতেই পারে। দুটি নির্দিষ্ট আইপি অ্যাড্রেস থেকে সাইবার আক্রমণ হয়েছিল, ফলে সার্ভার ডাউন হয়ে যায়।’ তিনি আশ্বাস দেন, টিকিট সংগ্রহ থেকে শুরু করে স্টেডিয়ামে প্রবেশ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ায় নজরদারি রাখা হবে এবং সাইট আবার চালু করা হবে, যদিও তা সীমিত পরিসরে।
জাতীয় স্টেডিয়ামে সাধারণ গ্যালারিতে আসন সংখ্যা ১৮,৩০০ এবং ক্লাব হাউস ও ভিআইপি মিলিয়ে মোট আসন সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার। এই সীমিত আসনের বিপরীতে চাহিদা ব্যাপক। বাফুফে সভাপতি জানান, অনেক সমর্থককে স্টেডিয়ামের বাইরে থাকতে হবে, তবে তাদের জন্য বাইরেও বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হবে। এ ছাড়া, আটটি বিভাগীয় শহরে ফ্যান জোন স্থাপন করার পরিকল্পনাও বাফুফের রয়েছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, টিকিট বিক্রির শুরুতেই যে বিশৃঙ্খলা ও হতাশা তৈরি হয়েছে, তা দেশের ফুটবলপ্রেমীদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে জন্য বাফুফেকে আরও পরিকল্পিত ও পেশাদার হতে হবে।