ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে একটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার প্রভাবে বাংলাদেশেও কম্পন অনুভূত হয়। ভূমিকম্পটি রিখটার স্কেলে ৫.২ মাত্রার ছিল এবং এটি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস (USGS) জানায়, ২৮ মে বুধবার রাত ১টা ৫৪ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ২টা ২৪ মিনিট) মণিপুর রাজ্যের রাজধানী ইম্ফলের ৩৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৪৭ কিলোমিটার গভীরে, যা ভূকম্পনের ব্যাপকতা ও অনুভূতির তীব্রতা বাড়িয়ে তোলে। কম গভীরতায় উৎপন্ন ভূমিকম্প সাধারণত আশপাশের এলাকায় বেশি শক্তিশালীভাবে অনুভূত হয়।
বাংলাদেশে ভূমিকম্পটির প্রভাব ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী, রংপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে স্পষ্টভাবে টের পাওয়া যায়। রাজধানী ঢাকায় অনেকেই মাঝরাতে ঘুম ভেঙে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বহু মানুষ তাড়াহুড়া করে ঘর ছেড়ে খোলা জায়গায় ছুটে যান। সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে লোকজন তাদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন।
এদিকে বাংলাদেশের ভূমিকম্প গবেষণা কেন্দ্রগুলো ভূমিকম্পের ব্যাপারে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তারা জানায়, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী হওয়ায় এবং এর গভীরতা কম হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় শক্তিশালী কম্পন অনুভূত হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি, তবুও বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভূমিকম্পটি একটি বড় ধরনের ভূ-কম্পন ছিল না, তবে এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় মাঝারি বা বড় মাত্রার ভূমিকম্প যে কোনো সময় ঘটতে পারে। ফলে ভূমিকম্প মোকাবিলায় প্রস্তুতি থাকা অত্যন্ত জরুরি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, “এই ধরনের ভূমিকম্প বারবার আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা একটি ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে বাস করি। আমাদের অবকাঠামোগত প্রস্তুতি, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জরুরি পরিকল্পনা থাকা উচিত।”
তিনি আরও বলেন, “বাড়িঘর নির্মাণে ভূমিকম্প সহনশীল নকশা অনুসরণ করা এবং জনসাধারণকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে প্রাণহানির আশঙ্কা অনেক কমে যাবে।”
দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। প্রয়োজনে উদ্ধার ও সহায়তা টিম প্রস্তুত রয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঘটনা বেড়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর ভূমিকম্প বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ ভূ-প্রবাহকে প্রভাবিত করে থাকে। বিশেষ করে হিমালয় পর্বতমালার সাবডাকশন জোন ও মিয়ানমার-আসাম ফল্ট লাইনের ভূমিকম্পগুলো বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
সর্বশেষ এই ভূমিকম্পটি আমাদের আবারও সতর্ক করেছে যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে আমাদের আরও দায়িত্বশীল ও সচেতন হতে হবে। ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিপর্যয় এড়াতে চাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, ভূমিকম্প প্রতিরোধক অবকাঠামো, সচেতনতামূলক কর্মসূচি ও জরুরি ব্যবস্থাপনা।