গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর সাম্প্রতিক বিমান হামলায় ফিলিস্তিনি ফটোসাংবাদিক ওসামা আল-আরবিদের পরিবারের নয় সদস্যসহ অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। বুধবার (২৮ মে) ভোর থেকে শুরু হওয়া এই হামলায় গাজার উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ চালানো হয়। গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, আরবিদ নিজেও আহত হয়েছেন। তিনি একজন ভিডিওগ্রাফার এবং স্থানীয় একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক।
এই হামলায় মধ্য গাজার একটি পরিবারের ছয় সদস্য এবং দক্ষিণ গাজার খান ইউনুস শহরের কাছে একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এছাড়া, কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত গাজায় মোট ৫৩,৯০১ জন নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নতুন করে হামলা শুরুর পর থেকে কমপক্ষে ৩,৭৪৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
এই সংঘাতে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা উদ্বেগজনক। আল জাজিরার সংবাদদাতা ইউমনা এলসাইদ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে হুমকিমূলক ফোন কল পেয়ে পরিবারকে অবিলম্বে তাদের বাড়ি ছেড়ে যেতে বলেন, কারণ তাদের আশেপাশে বিস্ফোরণ ঘটছিল। ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউটের চেয়ারপারসন খাদিজা প্যাটেল এই ঘটনাকে সাংবাদিকদের ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করার ইঙ্গিত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা এই যুদ্ধে সাংবাদিকদের জীবন ও কাজ রক্ষা করার জন্য ইসরায়েলি বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাতে চাই” ।
ইসরায়েলি বাহিনীর এই হামলায় গাজার অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন ।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি যুদ্ধবিরতি মেনে চলার জন্য জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখা যায় এবং যেসব জিম্মি এখনো মুক্তি পাননি, তাদের বিনাশর্তে ছেড়ে দেওয়া হয় ।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর এই হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তারা এই হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে তদন্তের দাবি জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করে এবং এর জন্য দায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
এই সংঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ ফিলিস্তিনি জনগণ। তাদের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, এবং তারা মানবিক সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা জরুরি।