রংপুরের সেনপাড়া এলাকায় জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ হামলা চালানো হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা এ হামলার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় পার্টি।
সন্ধ্যার পর থেকেই রংপুর প্রেস ক্লাবের সামনে জিএম কাদেরের অবস্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির নেতাকর্মীরা। তারা অভিযোগ করেন, জাতীয় পার্টি হচ্ছে আওয়ামী লীগের সহযোগী একটি দল এবং জিএম কাদেরের রংপুরে উপস্থিতি রংপুরবাসীর স্বার্থবিরোধী। এর প্রতিবাদে তারা স্লোগান দিতে থাকেন এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
প্রথমে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয় প্রেস ক্লাব এলাকা থেকে, যা জীবন বীমা মোড় এবং পরে গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেয়। সেখানে ১০ মিনিটের মতো বৃষ্টিতে ভিজে স্লোগান দেন তারা। পরে মিছিলটি সেনপাড়া এলাকায় জিএম কাদেরের বাসভবনের দিকে অগ্রসর হয়।
অভিযোগ অনুযায়ী, মিছিল থেকে কিছু উত্তেজিত কর্মী জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বাসভবনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে জানালার কাঁচ ভেঙে ফেলে। ওই বাড়িতেই বর্তমানে জিএম কাদের বসবাস করছেন। ঘটনার সময় তিনি বাসার ভেতরে ছিলেন। কিছুক্ষণ সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। হামলাকারীরা ফিরে যাওয়ার সময় বাসার সামনে রাখা একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কিছুক্ষণ পর জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতাকর্মীরাও সেখানে উপস্থিত হন। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হলেও পুলিশের হস্তক্ষেপে তা নিয়ন্ত্রণে আসে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর শাখার সভাপতি ইমতিয়াজ ইমতি বলেন, “জিএম কাদেরের রংপুরে অবস্থানের খবর পেয়ে আমরা মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করি। তবে আমাদের কেউ ওই বাসভবনে হামলায় অংশ নেয়নি।” তার দাবি, হামলার সঙ্গে তারা জড়িত নয় এবং এটি জনতার স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারাও একই বক্তব্য দেন। তারা বলেন, “আমরা শুধু প্রতিবাদ জানিয়েছি। পরে শুনেছি কিছু উত্তেজিত জনতা বাসভবনে হামলা করেছে। এর সঙ্গে আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত বা পরিকল্পনার কোনো সম্পর্ক নেই।”
জাতীয় পার্টির রংপুর মহানগরের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এটি একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক হামলা। আমাদের দলের চেয়ারম্যানের বাসায় সরাসরি আক্রমণ চালিয়ে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এটি শুধু জাপার ওপর নয়, গণতন্ত্রের ওপরও হামলা।”
এদিকে, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং পুরো ঘটনাটি তদন্ত করছে। কারা এই হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত এবং এর পেছনে কারা উস্কানি দিয়েছে, তা জানতে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজসহ বিভিন্ন প্রমাণ সংগ্রহ করছে।
এই ঘটনাটি রংপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। অনেকেই এ ধরনের হামলাকে গণতান্ত্রিক সহনশীলতার পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছেন।
এ ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। একইসঙ্গে তারা জিএম কাদেরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।