শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নে কালোবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে গচ্ছিত থাকা ভিজিএফ কর্মসূচির আওতাভুক্ত চাল জব্দ করেছে উপজেলা প্রশাসন। বুধবার (২৮ মে) গভীর রাতে চাল গোপনে বিক্রির খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান থেকে এই চাল উদ্ধার করে।
উল্লেখ্য, এই চাল গরিব ও অসহায় মানুষদের জন্য ঈদ উপলক্ষে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সরকারি এই চাল কালোবাজারে বিক্রির জন্য গুদামজাত করছিল বলে অভিযোগ ওঠে। ভিজিএফের (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) অধীনে বরাদ্দকৃত এই চালের পরিমাণ ছিল ১১৫ বস্তা, যার প্রতিটি বস্তায় ছিল ৫০ কেজি করে চাল। অর্থাৎ মোট উদ্ধারকৃত চালের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৫৭৫০ কেজি।
স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গভীর রাতে পোড়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের আশপাশের কয়েকটি স্থানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে অংশ নেয় উপজেলা প্রশাসনের একটি দল এবং নালিতাবাড়ী থানার পুলিশ সদস্যরা। অভিযানে তিনটি পৃথক স্থান—একটি বাসাবাড়ি, দুটি দোকান এবং একটি স্থানীয় স্পোর্টিং ক্লাবে হানা দিয়ে এসব চাল জব্দ করা হয়।
জানা গেছে, এই চালগুলো প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে নতুনভাবে প্যাকেট করা হচ্ছিল, যাতে সরকারি চিহ্ন মুছে ফেলে সাধারণ বাজারে বিক্রি করা যায়। সাধারণত ভিজিএফের চাল পাটের বস্তায় সরবরাহ করা হয়, যার উপর সরকারি লোগো ও তথ্য থাকে। কিন্তু অভিযুক্তরা সেই বস্তা পরিবর্তন করে চালগুলো স্থানীয় বাজারে পাচারের প্রক্রিয়া চালাচ্ছিল।
নালিতাবাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার ববি বলেন, “সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিতরণের জন্য এই চাল গরিব ও দুস্থ পরিবারের মধ্যে বিতরণের জন্য বরাদ্দ ছিল। কিন্তু অনৈতিকভাবে কিছু ব্যক্তি এসব চাল গুদামজাত করে রাখে বিক্রির জন্য। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের দল ও থানা পুলিশের সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং চালগুলো জব্দ করে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। তদন্ত শেষে মামলা করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারের ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির কোনো জায়গা নেই। যারাই জড়িত থাকুক না কেন, দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পোড়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন বলেন, “চাল বিতরণের জন্য স্লিপগুলো নির্ধারিতভাবে ইউপি সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। এরপর তারা প্রত্যেকের ওয়ার্ড অনুযায়ী চাল বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। যদি কেউ অনৈতিকভাবে চাল গুদামজাত করে থাকে, তবে সেটা প্রশাসনের তদন্তেই বেরিয়ে আসবে।”
তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বেশ কিছু দিন ধরেই এলাকায় চাল নিয়ে গোপন লেনদেন চলছে। কিছু ইউপি সদস্য ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা মিলেমিশে ভিজিএফ ও অন্যান্য সরকারি সাহায্যের চাল কালোবাজারে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ তাদের।
নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা বলেন, “আমরা জব্দকৃত চাল থানায় জমা রেখেছি। ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হবে। যদি কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করার জন্য আমরা ইতোমধ্যেই তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারি ত্রাণ নিয়ে এমন অনিয়ম অত্যন্ত দুঃখজনক। জনগণের কল্যাণে দেওয়া এই সাহায্য যেন যথাযথভাবে বিতরণ হয়, সে ব্যাপারে প্রশাসনের সঙ্গে একযোগে কাজ করবো।”
এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “গরিবের হক মেরে কিছু লোক নিজেদের পকেট ভারী করছে। সরকার যে সাহায্য দেয়, তা যদি সঠিকভাবে বিতরণ না হয়, তাহলে এর ফল ভোগ করতে হবে পুরো সমাজকে।”
কেউ কেউ প্রশাসনের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেছেন, “অন্তত প্রশাসন সতর্ক রয়েছে, এবং সময়মতো পদক্ষেপ নিয়েছে বলেই চালগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।”
উল্লেখ্য, নালিতাবাড়ীসহ দেশের অনেক এলাকায় অতীতেও ভিজিএফ, ভিজিডি ও অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সাহায্য আত্মসাৎ বা কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এসব অনিয়ম রোধে আরও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।