নির্বাচনী আমেজে ভরপুর এখন মতিঝিলস্থ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবন। প্রতিদিন সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন সংবাদকর্মী, কর্মকর্তা, কোচ ও সংগঠকেরা। কারণ একটাই—আগামী ১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। ম্যাচটিকে ঘিরে গোটা ফুটবল অঙ্গনে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ।
জাতীয় দলের প্রধান কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরা ফিরেছেন স্পেন থেকে ছুটি কাটিয়ে এবং ফিরেই শুরু করেছেন ব্যস্ত সময়। ঘরোয়া ফুটবলে নজর রাখার পাশাপাশি প্রবাসী ফুটবলারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে যাচ্ছেন তিনি। এসব বিশ্লেষণ করে ২৬ সদস্যের একটি প্রাথমিক দল ঘোষণা করেছেন তিনি, যেখানে তেমন কোনো চমক নেই।
প্রবাসী ফুটবলারদের মধ্যে অনুমিতভাবেই জায়গা পেয়েছেন দেওয়ান হামজা চৌধুরী, শমিত সোম ও ফাহামিদুল ইসলাম। এর মধ্যে ইংলিশ লিগে খেলা হামজা ভারতের বিপক্ষে অভিষেকের পর এবার প্রথমবারের মতো ঘরের মাঠে খেলার অপেক্ষায়। ২ জুন ঢাকায় আসার কথা তার। কানাডা প্রবাসী মিডফিল্ডার শমিত সোম প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের জার্সিতে খেলতে আসছেন, যার আগমন নির্ধারিত ৩ জুন।
অন্যদিকে, ফাহামিদুল ইসলামের দলভুক্তি নিয়ে হয়েছে নানা নাটক। ভারতের বিপক্ষে আগের ম্যাচের ক্যাম্পে ডাক পেলেও শেষ পর্যন্ত বাদ পড়েন তিনি। কাবরেরার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে সমর্থকরা প্রতিবাদ জানান, এমনকি বাফুফে সভাপতিকেও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে হয়। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে অবশেষে ফাহামিদুলকে দলে ফেরানো হয়েছে।
এবারের দলে জায়গা পেয়েছেন নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা সাদ উদ্দিন। তার ফিটনেস ও মানের উপর ভরসা রাখছেন কোচ। আবার দলে ফিরেছেন অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড সুমন রেজা, তবে বাদ পড়েছেন চন্দন রায়। ক্যাম্প শুরু হচ্ছে ৩০ মে, যেখানে আট থেকে দশটি অনুশীলন সেশন আয়োজনের পরিকল্পনা আছে। ক্যাম্প ও একটি প্রীতি ম্যাচের পর ২৩ জনের চূড়ান্ত দল ঘোষণা করা হবে।
মধ্যমাঠে হামজা ও শমিতের উপস্থিতিতে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ কি সবচেয়ে শক্তিশালী মিডফিল্ড নিয়ে নামছে? কাবরেরার মতে, ‘যদি সেরা নাও হই, আমাদের মিডফিল্ড খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।’ শমিতের মান নিয়ে তিনি আশাবাদী হলেও কন্ডিশনে মানিয়ে নিতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন।
এছাড়া, ইংল্যান্ড প্রবাসী কিউবা মিচেলকেও দলে আনার চেষ্টা চলছে। তবে সিঙ্গাপুর ম্যাচে তাকে পাওয়া যাবে কি না, তা নির্ভর করছে জাতীয় দল কমিটির ওপর। কোচ কাবরেরা জানিয়েছেন, তরুণ ও সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়দের দলে জায়গা দিতে চান তিনি।
সবমিলিয়ে প্রাথমিক দল নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী কোচ কাবরেরা। ভারতের বিপক্ষে সাম্প্রতিক ম্যাচে ভালো খেলা এবং সেখান থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে পূর্ণ তিন পয়েন্ট অর্জনের লক্ষ্য তার। কাবরেরা বলেন, ‘আমাদের নিজেদের ওপর আস্থা আছে। ভারতের বিপক্ষে জিততেও পারতাম। একই মানের পারফরম্যান্স হলে ভালো ফল হবে। তিন পয়েন্ট পাওয়া সম্ভব।’
বাংলাদেশের প্রাথমিক দল:
গোলরক্ষক: মিতুল মারমা, সুজন হোসেন, মেহেদি হাসান শ্রাবণ।
রক্ষণভাগ: শাকিল আহাদ তপু, জাহিদ হাসান শান্ত, রহমত মিয়া, ঈসা ফয়সাল, তাজ উদ্দিন, তারিক কাজী, তপু বর্মণ, সাদ উদ্দিন।
মধ্যভাগ: মোহাম্মদ হৃদয়, সৈয়দ শাহ কাজেম কিরমানি, সোহেল রানা, মুজিবুর রহমান জনি, শেখ মোরসালিন, জামাল ভূঁইয়া, হামজা চৌধুরী, শমিত সোম।
আক্রমণভাগ: ফাহামিদুল ইসলাম, ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, রাকিব হোসেন, ইমন শাহরিয়ার, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, আল আমিন সুমন রেজা।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, দল ও সমর্থকদের মধ্যে এখন বিশ্বাস ও আশার সেতুবন্ধন গড়ে উঠছে, যা ১০ জুনের ম্যাচে ভালো ফলের পূর্বাভাস দিচ্ছে।