শিরোনাম:
শিরোনাম:
Huawei Pura 80 Ultra রিভিউ: হুয়াওয়ের সেরা ফ্ল্যাগশিপ ফোন OnePlus Nord 5 Price in Bangladesh 2025 – নতুন চমক নিয়ে বাজারে আসছে ওয়ানপ্লাস নর্ড ৫! পুলিশ যেতে ভয় পেয়েছে: মুজিবের বাড়ি ভাঙার সময় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা প্রশ্নে ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক ১৩ জুন সকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ ৯ হাজার কোটি টাকার জ্বালানি তেল কিনছে সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জামায়াত প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ টিআইবি নিন্দা ও বাতিল চাই ‘হ্যান্ড অব গড’ অনুকরণে নেইমার, মাঠ ছাড়লেন লাল কার্ড দেখে হামজা চৌধুরীর আগমন, ভুটান ও সিঙ্গাপুর ম্যাচ ঘিরে ভক্তদের চরম উত্তেজনা

পুলিশ যেতে ভয় পেয়েছে: মুজিবের বাড়ি ভাঙার সময় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা প্রশ্নে ড. ইউনূস

মো : সবুজ মিয়া
সময় : বৃহস্পতিবার, জুন ১২, ২০২৫

দুর্বিষহ এক সময়: ড. ইউনূসের ভাষ্যে প্রশাসনের অচলাবস্থা ও শেখ মুজিবের বাড়ি ভাঙার প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশের ইতিহাসে কিছু মুহূর্ত থাকে যা দীর্ঘকাল মানুষের মনে গেঁথে থাকে। তেমনি একটি সময় ছিল যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির বাসভবনটি বুলডোজারের আঘাতে ভেঙে ফেলা হয়। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশে যে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ে সম্প্রতি মুখ খুলেছেন তৎকালীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

লন্ডনের খ্যাতনামা নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউস আয়োজিত এক সংলাপে অংশ নিয়ে ২০২৫ সালের ১১ জুন (বুধবার) তিনি এই প্রসঙ্গে নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। সাংবাদিকদের সরাসরি প্রশ্ন ছিল—যখন সিটি কর্পোরেশনের বুলডোজার দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাড়িটি ভাঙা হচ্ছিল, তখন কেন প্রশাসন নিশ্চুপ ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ড. ইউনূস অকপটে স্বীকার করেন, সে সময়কার পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত জটিল এবং প্রশাসন কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল।

তিনি বলেন, “তখন আমরা এমন এক অবস্থার মধ্যে ছিলাম যেখানে একসঙ্গে বহু সংকট মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। প্রতিটি ঘটনাই ছিল অতি সংবেদনশীল, আর তার মধ্যে একটি ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনের বিষয়টি। সরকারের পক্ষে একযোগে সব কিছুর জবাবদিহি করা বা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।”

ড. ইউনূস আরও বলেন, “সেই সময় দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ভেঙে পড়েছিল। পুলিশ রাস্তায় নামতে ভয় পেত। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিজেদেরও নিরাপদ মনে করত না। এক ধরনের অবিশ্বাস, আতঙ্ক এবং ক্ষোভ সমাজজুড়ে বিরাজ করছিল। জনগণ বলত, ‘তোমরা আমাদের ভাই, সন্তান, বোনকে গুলি করেছ—এখন আবার আমাদের নিরাপত্তা দিতে এসেছো?’ এই রকম প্রতিক্রিয়া পুলিশকে আরও সংকটে ফেলে দেয়।”

তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে তারা একটি সীমিত সময়ের জন্য দায়িত্বে এসেছিলেন, এবং সে সময়টায় সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল—দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। “আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল বিশৃঙ্খলা থেকে দেশকে বের করে আনা, এবং জনসাধারণের মধ্যে পুনরায় আইনের শাসন ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা। তবে এটি ছিল অত্যন্ত কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ একটি প্রক্রিয়া,” বলেন ইউনূস।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, “আমরা এমন এক পরিস্থিতিতে পড়ে গিয়েছিলাম, যেখানে পুলিশ বা প্রশাসনের কোনো কার্যক্রম জনসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। মানুষের মনে ক্ষোভ ছিল তুঙ্গে, আর সেই ক্ষোভের মধ্যেই অনেক কিছু ঘটে যায় যা হয়তো প্রতিরোধ করা আমাদের পক্ষে তখন সম্ভব হয়নি। আমরা আসলে জানতাম না, এই অস্থিতিশীলতা কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনব।”

তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, আগের সরকারের সময়ে সংঘটিত সহিংসতা, বিশেষত শিশুদের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা, প্রশাসনের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর প্রভাব পড়ে বর্তমান সরকারের কাজের গতিতেও। “পুলিশ তখন সমাজে বৈধতা হারিয়েছিল। তারা যেখানেই যেত, জনগণের রোষানলে পড়ত। অনেক সময় পুলিশকে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে। আমরা এমন এক বাহিনী পেয়েছিলাম যারা মনোবল হারিয়ে ফেলেছিল,” বলেন ইউনূস।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “যখন বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙার ঘটনা ঘটে, তখন দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি এতটাই টালমাটাল ছিল যে প্রশাসনের পক্ষে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো সম্ভব হয়নি। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা শুধু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলাম এবং দেখছিলাম কোথা থেকে কোন বিপদ আসছে।”

এসময় ড. ইউনূস স্পষ্ট করেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারে থাকার সময় তিনি ও তার সহকর্মীরা ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক পদে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেননি। “আমরা একটা সময় পার করে দিয়েছি, যা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কোনো রকমে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনা ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। ক্ষমতায় থাকা বা কোনো রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ গড়ার ইচ্ছা আমাদের ছিল না।”

তিনি জানান, “ভাগ্যক্রমে সময় আমাদের পক্ষে কাজ করেছে। মানুষের মনে পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতি যে বিরূপ মনোভাব ছিল, তা ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করে। মানুষ আবার আইনের প্রতি আস্থা রাখতে শুরু করে। এভাবেই ধীরে ধীরে আমরা একটা স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছাতে সক্ষম হই। আর এটি ছিল আমাদের অন্যতম বড় সাফল্য।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের সেই সময়কার সবচেয়ে বড় সংগ্রাম ছিল—মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা, এবং প্রশাসনকে তার স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনা। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা একাধিক উদ্যোগ নিই, তবে তাতে সময় লেগেছে।”

ড. ইউনূসের এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয়, একটি সংকটকালীন সময়ের সরকারের জন্য সমস্ত কিছুর ওপর তাৎক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ রাখা কতটা দুরূহ কাজ হতে পারে। শেখ মুজিবের বাসভবন ভাঙার মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে সেই সময়ে প্রশাসনের নিরবতা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তার জবাবে ড. ইউনূস মূলত সেই সময়কার ভয়াবহ বাস্তবতাকেই তুলে ধরেছেন।

একজন প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে তিনি মনে করেন, সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী বা কাঙ্ক্ষিতভাবে পরিচালিত হয় না। বিশেষ করে যখন দেশের ভেতরে বিভ্রান্তি, ক্ষোভ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে থাকে, তখন প্রশাসন অনেক সময়ই অসহায় হয়ে পড়ে।

শেষদিকে তিনি বলেন, “আমরা ইতিহাসের এক কঠিন অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছি। এখন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে বলে মনে হলেও, সেই সময়কার শিক্ষা আমাদের মনে রাখতে হবে। সমাজের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গাগুলোকে কখনোই দুর্বল হতে দেওয়া উচিত নয়। প্রশাসনকে হতে হবে জনগণের বন্ধু, না যে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয়।”

এই বক্তব্যে ড. ইউনূস মূলত একটি অস্থির সময়ের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চিত্র তুলে ধরেছেন। যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপই ছিল এক ধরনের ঝুঁকির মধ্যে, এবং কোথায় কীভাবে প্রতিক্রিয়া আসবে, তা বলা কঠিন ছিল। সেই সময়কার একটি বড় প্রশ্ন ছিল—কেন শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙা হলো? ড. ইউনূস সে প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিলেও, তিনি বুঝিয়ে দেন, সেই সময় সরকারের পক্ষে প্রতিটি ঘটনাকে প্রতিহত করা কিংবা মোকাবেলা করা প্রায় অসম্ভব ছিল।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

Tags

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ আদালতের রায় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গণতন্ত্র গ্রেপ্তার ১২ চট্টগ্রাম ছাত্র আন্দোলন জাতীয় নির্বাচন জাতীয় ঐক্য ড. ইউনূস ড. মুহাম্মদ ইউনূস তারেক রহমান ত্রিশাল দুর্নীতি নাহিদ ইসলাম নির্বাচন নির্বাচন কমিশন পাকিস্তান প্রধান উপদেষ্টা প্রশাসনিক সংস্কার ফিলিস্তিন বাংলাদেশ বাংলাদেশ অর্থনীতি বাংলাদেশ নির্বাচন বাংলাদেশ ফুটবল বাংলাদেশ রাজনীতি বিএনপি ভারত ময়মনসিংহ মানবাধিকার মুহাম্মদ ইউনূস রাজনীতি রাজনৈতিক ঐক্য রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক সংলাপ শেখ হাসিনা সংবিধান সচিবালয় সিঙ্গাপুর বনাম বাংলাদেশ সিলেটে কারফিউর মধ্যেও থেমে নেই চিনি চোরাচালান সুশাসন সেনাবাহিনী ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়াল খেলাপি ঋণের পরিমাণ

পুরাতন খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!