নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এ বিষয়ে তার দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, “আমাদের প্রস্তাবনা হলো, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে হবে।”
মঙ্গলবার রাজধানীর বেইলী রোডে অবস্থিত ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের বৈঠকের মধ্যাহ্ন বিরতিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি জাতীয় নির্বাচন, সংসদীয় কার্যক্রম এবং সাংবিধানিক সংস্কার সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর প্রস্তাবনাগুলো তুলে ধরেন।
তাহের বলেন, “আমরা মনে করি, নির্বাচনব্যবস্থার প্রতি জনসাধারণের আস্থা ফেরাতে হলে একটি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনী পদ্ধতির প্রয়োজন রয়েছে। সেই লক্ষ্যে জাতীয় নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন—দুটিই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।”
এছাড়াও তিনি সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী তাদের স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেছে বলে জানান। তিনি বলেন, “আমরা প্রস্তাব দিয়েছি যে, অর্থবিল, আস্থা ভোট ও সংবিধান সংশোধন– এই তিনটি ছাড়া বাকি সব বিষয়ে সংসদ সদস্যদের নিজস্ব বিবেক ও এলাকার জনগণের অভিমতের ভিত্তিতে ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা থাকতে হবে।”
তাহের আরও জানান, জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনাগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে সংসদীয় ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও গণতান্ত্রিক করার পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করে জামায়াতে ইসলামী।
এদিকে, বিএনপিও অনুরূপভাবে সংসদ সদস্যদের নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোটদানের স্বাধীনতা দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। তবে তারা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দলীয় অবস্থানের পক্ষেই ভোট দেওয়ার বিষয়টি সমর্থন করেছে। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা জামায়াতের অবস্থান জানতে চাইলে তাহের বলেন, “জরুরি পরিস্থিতি জরুরিভাবে মোকাবিলা করা হবে। তবে আমরা সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের তিনটি নির্দিষ্ট প্রস্তাবে আমাদের মত প্রকাশ করেছি।”
তিনি আরও জানান, “বিএনপির পক্ষ থেকে আমাদের অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে যে, তারা এই তিনটি প্রস্তাবে আমাদের সঙ্গে একমত। তবে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবের বিষয়ে তারা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেবে।”
এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য সাংবিধানিক সংস্কার এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনী পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করছে।
সার্বিকভাবে বলা যায়, জাতীয় ঐক্যমত্য গঠনের লক্ষ্যে আয়োজিত সংলাপে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে উত্থাপিত প্রস্তাবগুলো নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, সংসদীয় গণতন্ত্রের বিকাশ এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার দিকে ইঙ্গিত করে।
তাদের দাবি অনুসারে, শুধুমাত্র একটি নির্দলীয় ও গ্রহণযোগ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই জনগণের আস্থা অর্জন করা সম্ভব এবং সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করা যেতে পারে।
এই প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়ন হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার আস্থার সংকট অনেকাংশে নিরসন হবে এবং জনগণের মধ্যে নির্বাচন ও সংসদীয় রাজনীতির প্রতি বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে জামায়াতে ইসলামী।