প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আতিক মোর্শেদের বিরুদ্ধে তাঁর স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা জুঁইকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘নগদ’-এ উচ্চপদে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ঘটনায় দুদকের তদন্তে নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে প্রশাসনিক ও প্রযুক্তি মহলে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, আতিক মোর্শেদ নগদের কোনো কর্মকর্তা না হয়েও নিয়মিত প্রতিষ্ঠানটির অফিসে যাতায়াত করতেন এবং কার্যত প্রভাব বিস্তার করতেন। তাঁর এই অনাধিকার প্রবেশ এবং প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারণে প্রভাব খাটানোর অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে ২০২৫ সালের ২৫ মে রোববার দুদকের একটি তদন্ত দল নগদের গুলশান অফিসে অভিযান পরিচালনা করে।
দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, নগদে অভিযানের সময় সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জাকিয়া সুলতানা জুঁইকে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগত গুরুতর অনিয়ম ঘটেছে। জুঁইয়ের নিয়োগের ক্ষেত্রে উপযুক্ত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা যাচাই না করেই তাঁকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। পাশাপাশি, নিয়োগের পেছনে তাঁর স্বামী আতিক মোর্শেদের সক্রিয় ভূমিকা ছিল বলে তথ্য মিলেছে।
অভিযানের পর দুদকের সহকারী পরিচালক ইকরাম হোসেন জানান, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অসঙ্গতির পাশাপাশি গত দুই মাসের ব্যয়ের কাগজপত্র বিশ্লেষণেও গুরুতর অর্থনৈতিক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে নগদের বিল ভাউচারের মাধ্যমে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে আলাদা তদন্ত চলছে, যার মধ্যে সম্ভাব্য দুর্নীতির নানা দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আতিক মোর্শেদ ও তাঁর স্ত্রী জাকিয়া সুলতানাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদক তলব করতে পারে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, তাঁদের দুজনেরই ভূমিকা নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা বিস্তারিত জানতে চান। প্রয়োজনীয় নথিপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর তাঁদেরকে দুদকে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হতে পারে।
এই ঘটনায় নগদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একদিকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা হিসেবে নগদ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার প্রতিষ্ঠান, অন্যদিকে সেখানে এমন অনিয়ম প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও সুশাসনের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, নগদ বাংলাদেশের ডাক বিভাগের অধীনে পরিচালিত একটি ডিজিটাল আর্থিক সেবা। এই প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীল ভূমিকা থাকার কথা থাকলেও সাম্প্রতিক এই ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা এবং সরকারি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অনধিকার হস্তক্ষেপ নিয়ে জনমনে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
দুদক জানিয়েছে, তদন্ত প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে এবং অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অন্যদিকে, এ ধরনের অনিয়ম যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে, সে জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও অর্থ ব্যবস্থাপনায় আরো বেশি স্বচ্ছতা ও নজরদারির প্রয়োজনীয়তার কথাও উঠে এসেছে।
এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো, রাষ্ট্রীয় প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করা সম্ভব—যদি না জবাবদিহিতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া হয়।