চা-নাস্তার সংলাপ নয়, বরং বিচার, সংস্কার এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ খাঁন। তিনি বলেন, “সংলাপ যদি ফলপ্রসূ করতে চান, তাহলে সিদ্ধান্ত জানান। সময়ক্ষেপণ বন্ধ করুন। জনগণের প্রত্যাশা বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন—এই তিনটি বিষয়ে স্পষ্টতা আনুন।”
রোববার (১ জুন) বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগরে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য ছিল বরিশালে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের উপর জাতীয় পার্টির সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ, জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি, জিএম কাদেরসহ ফ্যাসিবাদী দোসরদের গ্রেফতারের দাবি এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা।
রাশেদ খাঁন বলেন, “আমাদের দাবি, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। নির্বাচন পূর্বে অবশ্যই জাতীয় ঐকমতের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য সংস্কার ও ২০১৩ থেকে শুরু হওয়া গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়ার রূপরেখা দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন—এ তিনটি একে অপরের পরিপূরক। এগুলোর মধ্যে কোনোটিকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা চলবে না। জনগণ এখন আর ফাঁকা কথা শুনতে চায় না। আগামীকাল সংলাপে নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ও সংস্কারের রূপরেখা ঘোষণা করতে হবে।”
সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিচার দাবি করে তিনি বলেন, “যদি শেখ হাসিনার বিচার হতে পারে, তাহলে জিএম কাদেরের কেন হবে না? আওয়ামী লীগের মতো জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করা হোক। এ দলটি দীর্ঘদিন ধরে সরকারের সহযোগী শক্তি হিসেবে গণতন্ত্র হত্যা ও ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছে। গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অপরাধে তারা সমানভাবে দায়ী।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “জাতীয় পার্টির নামে মামলা হলেও তাদের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। বরং সরকার তাদের মদদ দিচ্ছে। উপদেষ্টা পরিষদ বা ক্ষমতাসীন মহল থেকেই এই পৃষ্ঠপোষকতা চলছে। অন্যথায়, কীভাবে জাতীয় পার্টির সভা-সমাবেশে পুলিশ বাধা দেয় না, বরং সহযোগিতা করে?”
রাশেদ খাঁন আরও বলেন, “জিএম কাদের নিজেই বলেছেন, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন সম্ভব নয়। এ বক্তব্য থেকেই পরিষ্কার, তিনি শেখ হাসিনার এক নম্বর দোসর। শেখ হাসিনা যদি এখন দিল্লিতে পালিয়ে থাকেন, তাহলে জিএম কাদের এখনও কেন জেলের বাইরে? বরিশালের হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে, কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পার হলেও হামলাকারীরা গ্রেফতার হয়নি। যদি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের গ্রেফতার করা না হয়, তাহলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে। দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।”
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জিএম কাদেরকে গ্রেফতার করুন, নইলে সারাদেশে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা রাজপথে নামবে, তখন পরিস্থিতি সরকার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে না।”
গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশটি পরিচালনা করেন মহানগরের সাধারণ সম্পাদক নুরুল করিম শাকিল। এতে আরও বক্তব্য রাখেন পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, আব্দুজ জাহের, মাহফুজুর রহমান খান, রবিউল হাসান, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান, ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নেওয়াজ খান বাপ্পী প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে গড়ে উঠা প্রতিরোধ আন্দোলনে গণঅধিকার পরিষদ জনগণের পক্ষে থাকবে। তাঁরা অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন।