ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া: প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও ডকুমেন্ট প্রস্তুত
সমাজে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা, সহিংসতা কিংবা অন্যান্য অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হয়ে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হন। এসব ক্ষেত্রে আর্থিক ও সামাজিক সহায়তা পেতে হলে সরকার কিংবা বিভিন্ন সংগঠনের নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন করতে হয়। এমন একটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে “জুলাই ফাউন্ডেশন”। তারা নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ আবেদন গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা প্রদান করে। তবে এ সহায়তা পেতে হলে আবেদনকারীদের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-কানুন ও কাগজপত্র প্রস্তুত করে জমা দিতে হয়।
এই প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের মাধ্যমে যাচাইকরণ (ভেরিফিকেশন)। এটি বাধ্যতামূলক এবং আবেদনটি গৃহীত হওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করতে হয়। নিচে এই প্রক্রিয়ার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হলো।
প্রথমে আপনাকে যে জেলায় আপনার স্থায়ী ঠিকানা রয়েছে (জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মসনদ অনুযায়ী), সেই জেলার সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে নিজে উপস্থিত হতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অনেক সময় দেখা যায় কেউ ভিন্ন জেলার মাধ্যমে আবেদন করতে চান, যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) কিংবা জন্মসনদের যে ঠিকানা আছে, সেটাই এখানে চূড়ান্তভাবে প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
অনেক আবেদনকারী অন্য কাউকে দিয়ে কাগজপত্র জমা দেওয়ার চেষ্টা করেন, তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে নিজেই উপস্থিত হয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। কারণ, সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের কর্মকর্তারা সরাসরি আবেদনকারীকে দেখে যাচাই করবেন এবং প্রয়োজনে কিছু প্রশ্ন করবেন, যা অন্য কেউ সঠিকভাবে দিতে পারবেন না।
আবেদনের সময় যে সমস্ত কাগজপত্র জমা দিতে হবে, তা নিচে তালিকাবদ্ধ করা হলো। প্রতিটি ডকুমেন্টের চারটি করে সেট প্রস্তুত করতে হবে (অর্থাৎ এক কাগজের চারটি ফটোকপি), যাতে একটি মূল কপি নিজে রাখার পাশাপাশি বাকিগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেওয়া যায়।
এটি আবেদনকারীর পরিচয় ও ঠিকানা যাচাইয়ের প্রাথমিক দলিল। আপনার যদি জাতীয় পরিচয়পত্র থাকে, তবে সেটির ফটোকপি দিতে হবে। যদি না থাকে, তবে জন্মনিবন্ধন সনদের ফটোকপি জমা দিতে হবে। এই কাগজটি সর্বশেষ হালনাগাদ হওয়া নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ঠিকানা, নামের বানান এবং জন্মতারিখ ঠিক থাকে।
আপনি যদি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকেন, তবে সেই হাসপাতালের ছাড়পত্রের ফটোকপি জমা দিতে হবে। এটি অবশ্যই ডাক্তারের সিল ও স্বাক্ষরসহ হতে হবে। এই কাগজের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে আপনি সত্যিই আহত হয়েছিলেন এবং চিকিৎসা নিয়েছেন।
বিঃদ্রঃ যারা সরকারিভাবে কোনো সরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ভর্তি ছিলেন, তাদের ক্ষেত্রে এই ছাড়পত্র আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। কারণ অনেক সময় স্থানীয় প্রশাসন সেই তথ্য যাচাই করে দেখে নেয়।
আবেদনকারী যদি শরীরের কোনো স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হন, তাহলে সেই স্থানের একটি ছবি তুলে জমা দিতে হবে। এটি মূলত ভিজ্যুয়াল প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। তবে কেউ যদি চেহারার ছবি জমা দিতে চান, তাহলে একটি পাসপোর্ট সাইজ ছবি দিতে পারেন।
ছবি জমা দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে: ছবিতে যেন আবেদনকারীর মুখমণ্ডল পরিষ্কারভাবে দেখা যায় এবং আহত স্থানের চিত্রও স্বচ্ছ হয়।
এখানে মনে রাখার বিষয় হলো, মোট চার সেট কাগজ প্রস্তুত করতে হবে, তবে সবগুলো এক জায়গায় জমা দেওয়া হবে না। নিচে সেটি বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো:
আপনি চার সেট ডকুমেন্ট তৈরি করার পর, তিনটি সেট সিভিল সার্জনের অফিসে জমা দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সেটি গ্রহণ করবেন এবং যাচাই-বাছাই করবেন। তারা আপনার কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখে নেবেন তা যথাযথভাবে দেওয়া হয়েছে কিনা।
সচরাচর তারা যাচাই করেন:
- ঠিকানা সঠিক কিনা
- চিকিৎসার প্রমাণ বাস্তবসম্মত কিনা
- ছবি ও পরিচয় মিলছে কিনা
যখন আপনার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষ হবে এবং সিভিল সার্জনের অফিস থেকে ভেরিফায়েড হবে, তখন সেই চতুর্থ সেটটি জুলাই ফাউন্ডেশনে নির্ধারিত ফর্মসহ জমা দিতে হবে।
এটি হবে মূল আবেদনপত্র, যেটির মাধ্যমে ফাউন্ডেশন আপনাকে আর্থিক সহায়তা বা অন্যান্য সুবিধা প্রদানের জন্য বিবেচনা করবে।
১. সব ডকুমেন্টে নাম, বয়স, ঠিকানা, তারিখ ইত্যাদি সমন্বিত রাখতে হবে। যদি কোনো কাগজে ভুল থাকে, তবে আবেদন বাতিল হতে পারে।
২. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের কপি স্পষ্ট ও ঝকঝকে হতে হবে। অস্পষ্ট বা কাটাকাটি করা কপি গ্রহণযোগ্য নয়।
৩. সকল কাগজপত্রের সঙ্গে আবেদনকারীর ফোন নম্বর যুক্ত করতে হবে, যাতে প্রয়োজনে যোগাযোগ করা যায়।
৪. কোনোভাবেই মিথ্যা তথ্য দেওয়া যাবে না। কারণ যাচাইয়ের সময় তথ্য ভুয়া প্রমাণিত হলে আবেদন বাতিল হবে এবং ভবিষ্যতে আর কোনো সহায়তার জন্য যোগ্যতা থাকবে না।