বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ এক রায় ঘোষণার দিন নির্ধারিত হয়েছে আগামী রোববার। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামীর সেই নিবন্ধন এবং প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফিরে পাওয়ার আইনি লড়াইয়ের আপিল মামলার রায় ঘোষণা করবেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে চার সদস্যবিশিষ্ট আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চ এই মামলার রায় দেবেন। ইতোমধ্যে মামলাটি আপিল বিভাগের কার্যতালিকার শীর্ষে রাখা হয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং আলোচিত।
জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির শনিবার (৩১ মে) তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে রায়ের তারিখ নিশ্চিত করেন। তিনি লেখেন, ‘ইনশাল্লাহ আগামীকাল রোববার সকালে জামায়াতের নিবন্ধন মামলার রায় ঘোষণা করবেন আপিল বিভাগ।’
এর আগে, চলতি বছরের ১৪ মে মামলার শুনানি সম্পন্ন হয়। দীর্ঘ শুনানির পর আদালত রায়ের জন্য ১ জুন দিন ধার্য করেন। শুনানির দিনে জামায়াতের পক্ষে প্রধান আইনজীবী হিসেবে ছিলেন ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক। তাকে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট শিশির মনির এবং ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন।
মামলার পটভূমিতে জানা যায়, ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন প্রদান করে। তবে পরে বিভিন্ন কারণে এই নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা করা হয়। দলটির গঠনতন্ত্রে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক ও সংবিধানবিরোধী ধারা থাকার অভিযোগে হাইকোর্ট ২০১৩ সালে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা করেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত আপিল করলেও সেটি কার্যকর হয়নি এবং দলটি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন তালিকা থেকে বাদ পড়ে।
কিন্তু ২০২3 সালের ২২ অক্টোবর একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নেয় এই মামলা। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ জামায়াতের আগের খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবিত করেন। এর ফলে দলটির নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার পথ আইনি দিক থেকে আবারও উন্মুক্ত হয়।
এর ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ১২ মার্চ থেকে শুরু হয় পুনরুজ্জীবিত আপিলের শুনানি। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চলতে থাকা এই শুনানি শেষে অবশেষে রায়ের দিন নির্ধারিত হলো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই রায়ের প্রভাব শুধু জামায়াতের ওপর নয়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সামগ্রিক রাজনীতিতেও তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
এক সময়ের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন হারানোর ফলে তারা বিগত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি। দলীয়ভাবে না পারলেও অনেক সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী বা অন্য দলের ব্যানারে জামায়াত ঘরানার নেতারা নির্বাচন করেছেন। ফলে দলটির পুনরায় নিবন্ধন ফিরে পাওয়া কিংবা না পাওয়া, উভয় ক্ষেত্রেই দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্যে প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, তারা এই মামলায় ন্যায়বিচার পাবেন এবং নিবন্ধন ফিরে পেয়ে সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে পারবেন। অন্যদিকে, সমালোচকরা মনে করছেন, দলটির অতীত কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধ সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোর কারণে তাদের পুনরায় নিবন্ধন পাওয়া উচিত নয়।
সর্বোপরি, এই মামলার রায় শুধু একটি রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে না, বরং তা দেশের গণতন্ত্র, নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক সহনশীলতার প্রতিও একটি বার্তা বহন করবে। আগামীকাল রোববার (১ জুন) সকালের দিকে আপিল বিভাগের এই বহুল আলোচিত রায় প্রকাশ পাবে বলে জানা গেছে। এখন রাজনৈতিক অঙ্গনের সবার নজধর সেই রায়ের দিকেই।