আগামী ২ জুন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে বসতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এই সংলাপ আয়োজনের মধ্য দিয়ে পুনরায় জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে। শনিবার এক বিবৃতিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা পবন চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, “আগামী ২ জুন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার আলোচনার শুভ সূচনা করবেন।”
কমিশনের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ওইদিন বিকেল সাড়ে তিনটায় এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনার সূচনা করবেন কমিশনের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।
প্রথম দিনের উদ্বোধনের পরপরই, ৩ জুন মঙ্গলবার থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মূল আলোচনা পর্ব শুরু হবে। এবারের সংলাপে ৩২টি রাজনৈতিক দল ও জোটের একজন করে প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন চলতি বছরের ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত প্রথম ধাপের সংলাপ পর্বে ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে মোট ৪৫টি বৈঠক সম্পন্ন করে। তবে, এত বৈঠক সত্ত্বেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় প্রশ্নে এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নানা মতবিরোধ সত্ত্বেও কিছু বিষয়ে সর্বসম্মত মত ও আংশিক ঐকমত্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে, যা ভবিষ্যৎ আলোচনার ভিত্তি তৈরি করবে।
প্রথম ধাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর তালিকায় থাকলেও, দ্বিতীয় ধাপে সংলাপের জন্য ইউপিডিএফকে (ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি) আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সূত্রমতে, গত ১০ মে ইউপিডিএফ-এর সঙ্গে নির্ধারিত সংলাপ হঠাৎ মুলতবি করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা দেখা দেয় বিভিন্ন মহলে। তবে এবার কমিশন দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে, এবং দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় ইউপিডিএফ-কে অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দ্বিতীয় ধাপের আলোচনাগুলো হবে পুরোপুরি বিষয়ভিত্তিক। প্রথম ধাপে যেসব মৌলিক ও জটিল বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য রয়ে গেছে, এবার সে বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করেই আলোচনা চলবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সুনির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোই এবারের লক্ষ্য।
এ প্রসঙ্গে একজন কমিশন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা চাই এই সংলাপে দলগুলো বাস্তবসম্মত প্রস্তাব ও সমাধান নিয়ে এগিয়ে আসুক। বিষয়ভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে একটি কার্যকর সমঝোতায় পৌঁছাতে পারলে তবেই সংলাপ সফল হবে।”
সংলাপ চলাকালীন সময়ে প্রস্তাবিত বিষয়গুলোর মধ্যে থাকবে—নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাঠামো, ক্ষমতার ভারসাম্য, বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা এবং সংবিধান সংশোধনী সংক্রান্ত মতপার্থক্য। আলোচনার মাধ্যমে এসব বিষয়ে একটি সমন্বিত ও গ্রহণযোগ্য রূপরেখা তৈরির প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
কমিশনের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ ঈদের আগেই শেষ করার চেষ্টা থাকবে। তবে সময় স্বল্পতা ও আলোচনার গভীরতা বিবেচনায় নিয়ে যদি প্রয়োজন হয়, তবে ঈদের পরও সংলাপের পরবর্তী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
দেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসনে এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার এই উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ ও সদিচ্ছার ওপরই নির্ভর করছে সংলাপের সফলতা।
জনগণের প্রত্যাশা, দ্বিতীয় ধাপের এই সংলাপে দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত সত্ত্বেও একটি সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা তৈরি হবে, যা দেশের গণতন্ত্র ও সুশাসনের ভিত্তি আরও দৃঢ় করতে সহায়ক হবে।