জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, জাতির দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে কাজ করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সব রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে একটি জাতীয় সনদ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেখানে দেশের মৌলিক রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক কাঠামোতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। শনিবার সকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে। উল্লেখযোগ্যভাবে, গত ২০ মার্চ জামায়াতে ইসলামী সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু ও দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের দাবিতে কমিশনের কাছে লিখিত প্রস্তাব জমা দেয়। দলটি সেই প্রস্তাবে সংবিধান সংশোধন, জনপ্রশাসন সংস্কার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ এবং নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে।
আজকের সভায় জামায়াতে ইসলামী নেতারা আরও বলেন, একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত নয়। বরং নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে যতটুকু সময় প্রয়োজন, ততটুকু সময় সরকারকে দিতে হবে। তাঁরা মনে করেন, জাতীয় সংহতি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরির জন্য সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর যথাযথ সংস্কার অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে যা কিছু সংযোজন-বিয়োজন দরকার, তা সাহসিকতার সাথে করতে হবে।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, জাতির প্রত্যাশা পূরণের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সত্যিকারের সমঝোতা এবং জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া। তিনি উল্লেখ করেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কোনো একক দলের স্বার্থ নয়, বরং গোটা জাতির স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখেই কাজ করছে। প্রতিটি দলের মতামত গ্রহণ করে একটি সর্বজনীন রূপরেখা তৈরির প্রচেষ্টা চলছে, যাতে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ আরও শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ভিতের ওপর দাঁড়াতে পারে।
তিনি আরও বলেন, একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য দেশের সকল রাজনৈতিক শক্তিকে আস্থা ও আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসতে হবে। জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া টেকসই উন্নয়ন এবং গণতান্ত্রিক অগ্রগতি সম্ভব নয়। তাই মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় সনদ প্রণয়নই কমিশনের মূল লক্ষ্য।
সভায় অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক নেতারাও ঐকমত্য প্রকাশ করেন যে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছার যথাযথ প্রতিফলন নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ও সাংবিধানিক কাঠামো সংস্কার করে জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তাঁরা।