শিরোনাম:
শিরোনাম:
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ ৯ হাজার কোটি টাকার জ্বালানি তেল কিনছে সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জামায়াত প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ টিআইবি নিন্দা ও বাতিল চাই ‘হ্যান্ড অব গড’ অনুকরণে নেইমার, মাঠ ছাড়লেন লাল কার্ড দেখে হামজা চৌধুরীর আগমন, ভুটান ও সিঙ্গাপুর ম্যাচ ঘিরে ভক্তদের চরম উত্তেজনা জুলাই সনদে ঐকমত্য, নির্বাচনের পথে অগ্রগতি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বাজেটে ১২৫ কোটি টাকার বিশেষ তহবিলের প্রস্তাব ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টা বিশ্ব নেতৃত্বের মঞ্চে ট্রাম্পের দ্বিতীয় আবির্ভাব ব্যর্থ

৯ হাজার কোটি টাকার জ্বালানি তেল কিনছে সরকার

মো : সবুজ মিয়া
সময় : বুধবার, জুন ৪, ২০২৫

আগামী ছয় মাসের জন্য সিঙ্গাপুর থেকে আসছে ১২.৭৫ লাখ টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল, ব্যয় প্রায় ৯১৩৯ কোটি টাকা

বাংলাদেশ সরকার চলতি বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালের জন্য ১২ লাখ ৭৫ হাজার টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করতে যাচ্ছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক তিনটি আন্তর্জাতিক কোম্পানি থেকে। এসব কোম্পানি হলো পেট্রোচায়না ইন্টারন্যাশনাল (সিঙ্গাপুর) প্রাইভেট লিমিটেড, ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড এবং সায়নোকেম ইন্টারন্যাশনাল অয়েল প্রাইভেট লিমিটেড। এই আমদানিতে সরকারকে খরচ করতে হবে আনুমানিক ৭৪ কোটি ৯১ লাখ ১৮ হাজার ১২০ মার্কিন ডলার, যার বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা।

এই সিদ্ধান্তটি বুধবার, ৪ জুন, অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা উপদেষ্টা কমিটির সভায় গৃহীত হয়। সভাটি সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত হয় এবং এতে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এই আমদানি পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানান।

আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া

২০২৫ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়কালের জন্য পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির লক্ষ্যে একটি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে বাংলাদেশ সরকার। এতে মোট ৯টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ের পর ৮টি প্রস্তাবই কারিগরি মূল্যায়নে উত্তীর্ণ হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে কম দামে প্রস্তাব দেয়ার কারণে পেট্রোচায়না ইন্টারন্যাশনাল, ভিটল এশিয়া এবং সায়নোকেম ইন্টারন্যাশনালকে নির্বাচিত করা হয়।

এই আমদানির প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল ২০২৪ সালের ২৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়–সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা উপদেষ্টা কমিটির অনুমোদন। এরপর ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এই আমদানি প্রস্তাবকে ‘সরকার থেকে সরকার’ (Government to Government – G2G) ভিত্তিতে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।

আমদানি পদ্ধতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির মাধ্যমে দেশের জ্বালানি সরবরাহ পরিস্থিতি আরও সুসংহত হবে, যা শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং পরিবহন খাতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। প্রতিবছরই বাংলাদেশ এই সময়কালে জ্বালানি তেলের চাহিদা মেটাতে আন্তর্জাতিক বাজারের উপর নির্ভর করে থাকে। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে সরকারের লক্ষ্য হলো জ্বালানি খাতে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং কোনো ধরনের ঘাটতি এড়ানো। বিশেষ করে গ্রীষ্ম ও শীতকালীন মৌসুমে চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়, তাই পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে এই আমদানিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সার ও খনিজ আমদানির সিদ্ধান্তও গৃহীত

একই সভায় জ্বালানি তেল আমদানির পাশাপাশি আরও দুটি বড় ধরনের আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কানাডা ও রাশিয়া থেকে মোট ৭০ হাজার টন এমওপি (মিউরিয়েট অব পটাশ) সার আমদানি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৩০ হাজার টন রক ফসফেট আমদানির সিদ্ধান্ত।

এই দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সার ও খনিজ পদার্থ আমদানির এই পদক্ষেপ দেশের কৃষিখাত ও শিল্প উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও জ্বালানি নিরাপত্তা

জ্বালানি খাতে এই বড় ধরনের আমদানির সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যে কোনো অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে এমন একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য যেখানে শিল্প, কৃষি ও গৃহস্থালি খাতে জ্বালানির চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বৈঠক শেষে বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি যেন সাশ্রয়ী মূল্যে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে জ্বালানি তেল ও সার আমদানি করে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করতে পারি। একই সঙ্গে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”

বৈশ্বিক বাজার ও দাম

বলা প্রয়োজন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বর্তমানে চড়াও, যার ফলে আমদানির ব্যয়ও বেড়েছে। তবে দরপত্র প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতা থাকায় বাংলাদেশ সরকার তুলনামূলকভাবে কম দামে চুক্তি করতে সক্ষম হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, সরবরাহ চেইনে বিঘ্ন এবং চাহিদা বৃদ্ধির কারণে জ্বালানি তেলের বাজারে বেশ অস্থিরতা বিরাজ করছে। সেই প্রেক্ষাপটে সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সময়োপযোগী চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার একটি সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

Tags

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ আদালতের রায় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গণতন্ত্র গ্রেপ্তার ১২ চট্টগ্রাম ছাত্র আন্দোলন জাতীয় নির্বাচন জাতীয় ঐক্য ড. ইউনূস ড. মুহাম্মদ ইউনূস তারেক রহমান ত্রিশাল দুর্নীতি নাহিদ ইসলাম নির্বাচন নির্বাচন কমিশন পাকিস্তান প্রধান উপদেষ্টা প্রশাসনিক সংস্কার ফিলিস্তিন বাংলাদেশ বাংলাদেশ অর্থনীতি বাংলাদেশ নির্বাচন বাংলাদেশ ফুটবল বাংলাদেশ রাজনীতি বিএনপি ভারত ময়মনসিংহ মানবাধিকার মুহাম্মদ ইউনূস রাজনীতি রাজনৈতিক ঐক্য রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক সংলাপ শেখ হাসিনা সংবিধান সচিবালয় সিঙ্গাপুর বনাম বাংলাদেশ সিলেটে কারফিউর মধ্যেও থেমে নেই চিনি চোরাচালান সুশাসন সেনাবাহিনী ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়াল খেলাপি ঋণের পরিমাণ

পুরাতন খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর