তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের আলোচনায় আসছে দেশের রাজনীতি ও নির্বাচন ইস্যু
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ এক বৈঠকের সূচনা হতে যাচ্ছে আগামী ১৩ জুন। ওই দিন সকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
লন্ডনে অবস্থানরত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ বৈঠক সংক্রান্ত বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, এই বৈঠকের জন্য নির্দিষ্ট কোনো কাঠামো বা আনুষ্ঠানিক রূপরেখা নির্ধারিত নেই। মূলত এটি একটি মুক্ত ও খোলামেলা আলোচনা সভা হতে যাচ্ছে, যেখানে দেশের সমসাময়িক রাজনীতি ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “যেহেতু তারেক রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলটির কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব, তাই স্বাভাবিকভাবেই তাকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার আগ্রহ রয়েছে। উভয়ের মধ্যে আলোচনায় নানা দিক উঠে আসতে পারে—বর্তমান রাজনৈতিক সংকট, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সম্ভাব্য উদ্যোগ, নির্বাচনকালীন সরকার কাঠামো, এবং প্রতিশ্রুত নির্বাচন সংস্কারপত্র বা ‘জুলাই চার্টার’।”
তিনি আরও বলেন, “বৈঠকে আলোচনার বিষয় নির্দিষ্টভাবে ঠিক না থাকলেও স্বাভাবিকভাবে এটি দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতি প্রকৃতি নির্ধারণে প্রভাব ফেলতে পারে।”
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্তমানে যে অচলাবস্থা বিরাজ করছে, এই বৈঠক সেই প্রেক্ষাপটে নতুন মোড় আনতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিগত কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে উত্তেজনা, অনাস্থা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে এই ধরনের সংলাপ ও আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ করে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে যে পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং অব্যাহত বিরোধ চলে আসছে, তা নিরসনের জন্য একটি কার্যকর মধ্যস্থতা দরকার বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। সেই অর্থে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার এই উদ্যোগকে সময়োপযোগী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
প্রেস সচিবের বক্তব্য অনুযায়ী, বৈঠকে আলোচনা হতে পারে এমন কিছু সম্ভাব্য বিষয় তুলে ধরা যায়—
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই আলোচনা রাজনৈতিক বিরোধ নিরসনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। অধ্যাপক ইউনূস একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি এবং শান্তির প্রতীক হিসেবে বহু বছর ধরে কাজ করে আসছেন। ফলে তার মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত যেকোনো আলোচনা রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি গ্রহণযোগ্য প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
বহুদিন ধরে রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা তারেক রহমানের সরাসরি অংশগ্রহণও এই বৈঠককে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। যদিও তিনি বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন এবং দেশে প্রত্যাবর্তন নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নেই, তবে তার সক্রিয়তা দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত এই বৈঠক সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে দলটির একাধিক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এই আলোচনাকে তারা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। রাজনৈতিক অচলাবস্থার সমাধানে আলোচনার দরজা খোলা রাখতে চায় দলটি। তবে বাস্তবসম্মত প্রস্তাব ছাড়া এই ধরনের আলোচনা তেমন ফলপ্রসূ হবে না বলেও মত দেন তারা।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এই বৈঠককে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরির পথে একটি ‘ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সরকারের আশা, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের অবস্থান কিছুটা নমনীয় করবে এবং একটি সম্মিলিত নির্বাচনী রূপরেখা তৈরিতে সহায়তা করবে।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “আমরা চাই এমন একটা প্রক্রিয়া শুরু হোক যেখানে দলগুলো মুখোমুখি বসে মতবিনিময় করতে পারে। আলোচনা চলবে—সমঝোতা হবে কি না, তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে।”