গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর থেকে দেশের প্রশাসনিক কেন্দ্র সচিবালয়ে একের পর এক আন্দোলন দেখা যাচ্ছে। সরকারের নানা সিদ্ধান্ত ও আইনের প্রতিবাদে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন সময় বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন। সর্বশেষ, তারা একটি নতুন আইনের বিরোধিতা করে সরব হয়েছেন এবং স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন—যদি আইনটি বাতিল না করা হয়, তাহলে তারা সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করা বন্ধ করে দেবেন। এই ঘোষণা প্রশাসনিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে।
এই প্রেক্ষাপটে সচিবালয়ের অভ্যন্তরে সম্ভাব্য ক্যু বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জুলাই বিপ্লবের অন্যতম নায়ক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখপাত্র হাসনাত আব্দুল্লাহ। সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক গুরুত্বপূর্ণ পোস্টে এ বিষয়ে কথা বলেন। পোস্টে তিনি সরাসরি সচিবালয়ের কিছু কর্মকর্তার কর্মকাণ্ডকে ‘ক্যু’ আখ্যা দেন এবং জনগণকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান।
হাসনাত আব্দুল্লাহ তার পোস্টে লিখেন, “জনদুর্ভোগ ও ফ্যাসিবাদ দীর্ঘায়িত করার ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে পরিচিত সচিবালয়ের ক্যু সম্পর্কে সচেতন থাকুন। পাঁচ আগস্ট পর্যন্ত কালো ব্যাজ ধারণ করে, হাসিনাকে সমর্থন দিয়ে অফিস করা সচিবালয়ের কর্মকর্তারা তাদের ক্যু অব্যাহত রাখলে তাদের পরিণতি পতিত হাসিনার মতো হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে। সুতরাং, সাবধান!”
তরুণ এই রাজনীতিবিদের এমন বক্তব্যে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর প্রশাসনের কিছু অংশে এখনও পুরনো ধ্যান-ধারণা রয়ে গেছে, যা গণতন্ত্রের অগ্রগতিতে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে। সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের কিছু সিদ্ধান্ত এবং আচরণ নতুন সরকারকে চাপে ফেলতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
হাসনাত আব্দুল্লাহর সতর্কবার্তা এই বাস্তবতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচন করেছে। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, দেশের মানুষ অতীতের মতো আর নির্বিকার নয়। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং যেকোনো অগণতান্ত্রিক তৎপরতার জবাব দিতে প্রস্তুত। তাঁর মতে, সচিবালয়ে যদি কেউ আবারও জনগণের রায় অমান্য করে কাজ করতে চায়, তবে তাদের পরিণতিও ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হওয়া ব্যক্তিদের মতো হবে।
এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রশাসনের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা আরও একবার প্রমাণিত হলো। গণতান্ত্রিক চেতনায় উজ্জীবিত জনগণ যেমন অধিকার সচেতন, তেমনি প্রশাসনের প্রতিটি স্তরকেও সেই চেতনার প্রতিফলন ঘটাতে হবে—এমনটাই এখন সময়ের দাবি।