সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ়, বিভেদের কোনো প্রশ্নই ওঠে না: সেনা সদর
ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে সেনা সদর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনো রকম বিভেদ বা মুখোমুখি অবস্থান নেই। দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা রক্ষায় এই দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়পূর্ণ ও সুদৃঢ় সম্পর্ক বজায় রয়েছে। সেনা সদর থেকে জানানো হয়, বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই।
সোমবার (২৬ মে) এই সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সেনা সদর দপ্তরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম উদ দৌলা। তিনি বলেন, “সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পূর্ণ সমন্বয় রয়েছে এবং আমরা একসঙ্গে দেশের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো অনেক খবর পুরোপুরি ভুয়া এবং বিভ্রান্তিকর।” তার মতে, রাষ্ট্রের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েই প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর অবস্থান অত্যন্ত সুস্পষ্ট।
তিনি আরও বলেন, “সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে দেশের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ এবং যৌথভাবে আমরা জাতীয় স্বার্থে কাজ করে চলেছি।” সেনাবাহিনীর ভূমিকা যে সবসময়ই গঠনমূলক এবং রাষ্ট্রের আইন-কানুন ও সংবিধান মেনেই পরিচালিত হয়, সেটিও পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেন তিনি।
বন্দর ও করিডর সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম উদ দৌলা বলেন, “যেকোনো প্রক্রিয়ায় যদি জাতীয় নিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটে—সেখানে সেনাবাহিনীর জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। দেশের স্বার্থের বাইরে গিয়ে সেনাবাহিনী কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় না বা গ্রহণ করে না। এ নিয়ে জনমনে যে সব আশঙ্কা ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলোও পুরোপুরি মিথ্যা।”
নির্বাচন ঘিরে ছড়ানো গুজব নিয়েও সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন সেনা কর্মকর্তারা। সেনা সদরের কর্নেল শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, “ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন না হলে সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করবে—এ ধরনের গুজব ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক। সেনাবাহিনী কখনোই ক্ষমতা গ্রহণের বিষয়ে আগ্রহী নয়, এমনকি এই বিষয়ে আমাদের অভ্যন্তরেও কোনো আলোচনা হয়নি।”
তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, “সেনাবাহিনী গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং সংবিধান অনুযায়ী কাজ করে। ক্ষমতা গ্রহণ করার কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই, এবং এটি স্পষ্ট করে বলা দরকার যে, দেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর কোনো হস্তক্ষেপের ইচ্ছাও নেই।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি মাসজুড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সেনাবাহিনীর নানা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ বিতরণ, সড়ক নির্মাণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন এবং চিকিৎসা সহায়তা কার্যক্রম। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, সেনাবাহিনী দেশের জনগণের পাশে আছে এবং দেশের উন্নয়নে সর্বদা সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
এছাড়া, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত টহল, চোরাচালান প্রতিরোধ এবং শান্তিরক্ষী মিশনে অংশগ্রহণের বিষয়গুলোও তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অন্যতম প্রধান অংশীদার হিসেবে বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম উদ দৌলা বলেন, “আমাদের লক্ষ্য সবসময়ই দেশের শান্তি, অগ্রগতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এজন্য সরকার ও সেনাবাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেনাবাহিনী নিয়ে নানা ধরনের গুজব, মিথ্যা তথ্য ও বিভ্রান্তিকর বিশ্লেষণ ছড়ানোর বিষয়ে সেনা সদর থেকে সতর্কতা উচ্চারণ করা হয়। বলা হয়, জনসাধারণকে এসব গুজবে কান না দিয়ে সঠিক তথ্য যাচাই করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের গুজবের মাধ্যমে দেশবিরোধী শক্তিগুলো সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে চায়।
সেনা কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের আহ্বান জানান, যাতে গণমাধ্যম সঠিক তথ্য তুলে ধরে এবং বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার থেকে বিরত থাকে। তারা বলেন, “সত্য ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে সংবাদ পরিবেশন করলেই দেশ ও জাতির মঙ্গল হয়।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম উদ দৌলা জানান, সেনাবাহিনীর কোনো কার্যক্রম সরকারের নির্দেশ ও অনুমতি ব্যতীত পরিচালিত হয় না। সরকার ও সেনাবাহিনী একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করছে।
এছাড়াও তিনি বলেন, সেনাবাহিনী সবসময় রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করে কাজ করে এবং দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হয় না। “আমরা নিরপেক্ষ, দায়িত্বশীল এবং সংবিধানবদ্ধ শক্তি হিসেবে কাজ করে যাব,”—তিনি যোগ করেন।
সামগ্রিকভাবে এদিনের সংবাদ সম্মেলনে সেনা সদর থেকে পরিষ্কার বার্তা দেওয়া হয় যে, সেনাবাহিনী দেশের স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও অগ্রগতির পক্ষে এবং সরকার ও জনগণের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করে চলেছে। কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র, গুজব কিংবা অপপ্রচার সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল অবস্থান থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না।