পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংকট এবং রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পেছনে ১৯৭২ সালের সংবিধানে স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব উপেক্ষাকেই মূল কারণ হিসেবে দেখছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। দলটি সম্প্রতি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এক সংলাপে এই বিষয়টি তুলে ধরে পার্বত্য অঞ্চলের জন্য বিশেষ স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানিয়েছে।
শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর জাতীয় সংসদের এলডি হলে শুরু হওয়া এ সংলাপে ইউপিডিএফ-এর ঢাকা অঞ্চলের সংগঠক মাইকেল চাকমার নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল—পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সেখানে দীর্ঘ ছয় দশক ধরে চলমান সংঘাত এবং এই সংকট নিরসনে সাংবিধানিক কাঠামোর ভেতরে থেকে সমাধানের পথ খোঁজা।
মাইকেল চাকমা বলেন, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব উপেক্ষা করা হয়েছিল। এই অবহেলার ফলেই ওই অঞ্চলে দীর্ঘ সময় ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলেছে। সেই প্রেক্ষাপটে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সম্ভাব্য সংবিধান সংস্কারে যেন অতীতের সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্যই তারা এই দাবি তুলেছেন।
তিনি আরও বলেন, “আমরা কমিশনকে বলেছি, যেন সংবিধান সংস্কারে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয় এবং সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে থেকেই সমস্যার টেকসই সমাধান খোঁজা হয়। তা না হলে সেখানে আবারও নতুন সংকট তৈরি হতে পারে, যা দেশের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।”
সংলাপে কমিশনের পক্ষ থেকে তাদের দাবির বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট আশ্বাস দেওয়া হয়নি বলে জানান মাইকেল চাকমা। তবে তিনি বলেন, কমিশন জানিয়েছে যে, বাংলাদেশকে চারটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করার একটি প্রস্তাবনা তারা বিবেচনায় এনেছে। এমন প্রেক্ষাপটে মাইকেল চাকমার বক্তব্য, “যদি দেশে চারটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হতে পারে, তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে পঞ্চম বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করতে বাধা কোথায়?”
তিনি বিশ্বাস করেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে একটি বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা দিলে, সেখানে দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলোর একটি টেকসই ও শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, সংলাপটি দুপুর ১২টার দিকে মূলতবি করা হয় এবং পরবর্তী বৈঠক আগামী ১৫ মে বিকেলে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে এই দাবির বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই প্রস্তাবনার মাধ্যমে ইউপিডিএফ আশা করছে, রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও সাংবিধানিক কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করা সম্ভব হবে।