সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা তিন দফা দাবিতে আগামীকাল সোমবার (২৭ মে) থেকে সারাদেশে পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ধারাবাহিকভাবে এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টা ও অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করার পর এবার তারা পূর্ণদিবস কর্মবিরতির মতো কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষক নেতারা।
রোববার (২৬ মে) দুপুরে এক বিবৃতিতে এই কর্মসূচির বিষয়টি নিশ্চিত করেন ‘সহকারী শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’-এর নেতা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ। তিনি জানান, “আমরা ৫ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছি। এরপর ১৭ মে থেকে শুরু করেছি দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি। ২১ মে থেকে পালন করছি অর্ধদিবস কর্মবিরতি। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, এবার আমরা ২৭ মে থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবো।”
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের দাবির মূল বিষয় হচ্ছে তাদের ন্যায্য বেতন কাঠামো এবং পদোন্নতি প্রক্রিয়ার সহজীকরণ। তারা দীর্ঘদিন ধরে ১৩তম গ্রেডে বেতনভুক্ত অবস্থায় রয়েছেন, যেখানে প্রধান শিক্ষকেরা পান ১১তম গ্রেড। সম্প্রতি সরকারের গঠিত কনসালটেশন কমিটি সহকারী শিক্ষক পদকে ‘অ্যান্ট্রি পজিশন’ হিসেবে চিহ্নিত করে ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার সুপারিশ করে। তবে শিক্ষকরা তা ন্যায্য মনে করছেন না এবং এটি সংস্কার করে ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছেন।
তাদের তিন দফা দাবি হলো:
১. কনসালটেশন কমিটির সুপারিশের যৌক্তিক সংস্কার করে সহকারী শিক্ষক পদকে অ্যান্ট্রি পদ ধরে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ।
২. ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে জটিলতা রয়েছে, তা নিরসন করা।
৩. প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করা এবং পদোন্নতির প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা।
বর্তমানে দেশে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে প্রায় ৪ লাখ শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই সহকারী শিক্ষক। তারা মনে করছেন, তাদের দীর্ঘদিনের অবদান ও সেবার যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে না। সমমর্যাদা, উপযুক্ত বেতন এবং স্বচ্ছ পদোন্নতির দাবিতেই তারা আন্দোলনে নেমেছেন।
শিক্ষকদের এই আন্দোলন প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি কর্মবিরতিতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে দ্রুত তাদের দাবিগুলোর যৌক্তিকতা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য, যাতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতির সম্মুখীন না হয় এবং শিক্ষকরা তাদের ন্যায্য প্রাপ্য ফিরে পান।