তার নাম মৌমি। চট্টগ্রামের কোতোয়ালি এলাকার এক কলেজছাত্রী। বয়স উনিশ। জীবনের এই দীর্ঘ সময়জুড়ে তিনি অপেক্ষা করছেন একটি মাত্র জিনিসের জন্য— বাবার স্বীকৃতি। তার বাবা মোহাম্মদ মুছা, চট্টগ্রামের বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা। স্থানীয়ভাবে ‘প্যাকেজ মুসা’ নামে পরিচিত। মাত্র দু’বছর বয়সে মা-বাবার বিচ্ছেদের পর থেকে বাবার স্নেহ কিংবা উপস্থিতি— কোনোটাই পাননি মৌমি।
দুঃখ-কষ্টে বেড়ে ওঠা এই তরুণী জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে বাবার শূন্যতা অনুভব করেছেন। তার মা সুমি একটি পোশাক কারখানায় কাজ করে মেয়েকে বড় করেছেন। দ্বিতীয় বিয়ে করলেও মেয়ে মৌমিকে কখনো আলাদা করেননি। অভাব-অনটনের মাঝেও মেয়ের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। মৌমিও হাল ছাড়েননি। নিজের পড়ালেখার খরচ চালানোর জন্য তিনি টিউশনি করেন। কিন্তু স্কুল-কলেজে সহপাঠীদের কাছে যখন বাবার পরিচয় জানতে চাওয়া হয়, তখন শুধু চুপ করে থাকেন।
মৌমির কণ্ঠে বাবার প্রতি অভিমানের সুর স্পষ্ট। তিনি বলেন, “বাবার নাম শুনলেই সবার মনে ভালোবাসার ছবি আঁকে। কিন্তু আমার কাছে বাবা শুধু একটি হতাশার নাম। আমি উনিশ বছর ধরে তার অপেক্ষায় আছি। যদি কোনোদিন সামনে পাই, শুধু একবার ‘বাবা’ বলে ডাকব। জিজ্ঞেস করব— কেন আমাকে জন্ম দিয়েছিলেন? আমার অপরাধ কী ছিল?”
মৌমির মা সুমি জানান, ২০০৩ সালে প্রেম করে মুসাকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু মুসার অনিয়মিত জীবনযাপন এবং একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্কের কারণে সে সংসার টেকেনি। বিচ্ছেদের পর আদালতে মামলা করলে মুসা এককালীন মাত্র ৫০ হাজার টাকা দেন। এরপর আর কোনো নিয়মিত ভরণপোষণ দেননি। এমনকি তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকলেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করছে না বলে অভিযোগ সুমির।
মৌমির আইনজীবী মোমেনুল হক বলেন, “মুসা ইচ্ছাকৃতভাবে মৌমিকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন না। আদালতের রায় সত্ত্বেও দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন। আমরা আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি, যেন মৌমি তার ন্যায্য অধিকার পায়।”
অভিযোগের বিষয়ে মোহাম্মদ মুছার প্রতিক্রিয়া ছিল সংক্ষিপ্ত ও এড়িয়ে যাওয়া ধরনের। তিনি বলেন, “আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। মামলা-মোকদ্দমার বিষয়গুলো দ্রুত মিটমাট করে ফেলবো।” তবে মেয়ের স্বীকৃতির বিষয়ে কোনো স্পষ্ট উত্তর না দিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্ন এড়িয়ে চলে যান তিনি।
উনিশ বছর ধরে মৌমির একটিই চাওয়া— বাবার কাছ থেকে স্বীকৃতি ও একটি জবাব। এই চাওয়া যেন কেবল একটি নাম নয়, একজন সন্তানের আত্মপরিচয়ের লড়াই, তার অস্তিত্বের স্বীকৃতি।
/আমারদেশ