পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণা: জনসাধারণকে সতর্ক থাকার আহ্বান
সাম্প্রতিক সময়ে প্রতারণার নতুন কৌশল হিসেবে কিছু অসাধু চক্র বাংলাদেশ পুলিশের পরিচয় ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জনগণকে সতর্ক থাকার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রোববার, ২৬ মে ২০২৫ তারিখে এক আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ সদর দপ্তর এ তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের নাম, পদবী এবং কর্মকর্তাদের ছবি ব্যবহার করে একদল প্রতারক নিজেদের পুলিশ সদস্য হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে এবং এ পরিচয়ের সুযোগ নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। এই ধরনের ভুয়া পরিচয়ধারীদের ফাঁদে না পড়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স শাখার অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “সম্প্রতি কিছু ব্যক্তি পুলিশের ছদ্মবেশে প্রতারণা করছে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এসব প্রতারক পুলিশ অফিসারদের নাম, পদবি এমনকি ছবি পর্যন্ত ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে, যাতে সহজেই বিশ্বাস অর্জন করা যায়।”
এআইজি ইনামুল হক আরও বলেন, “এই চক্র সাধারণ মানুষের অসচেতনতার সুযোগ নেয়। অনেক সময় তারা জরুরি পরিস্থিতির ভান করে টাকা চায়, সাহায্য প্রার্থনা করে, কিংবা পুলিশের নাম ভাঙিয়ে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে। অনেকেই না জেনে বা আতঙ্কে পড়ে এই প্রতারণার শিকার হন।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, পুলিশের নাম ব্যবহার করে প্রতারণা একটি গুরুতর অপরাধ। এ ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
পুলিশ বিভাগ জানায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এমন প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার কিংবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এই ধরনের প্রতারণা সংঘটিত হচ্ছে। ফলে জনগণের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।
এআইজি ইনামুল হক বলেন, “আমরা চাই মানুষ সচেতন হোক। কোন ব্যক্তি পুলিশ পরিচয়ে হঠাৎ ফোন করলে বা মেসেজ পাঠালে, এবং সন্দেহজনক কিছু দাবি করলে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করুন। যাচাই-বাছাই ছাড়া কাউকে অর্থ প্রদান করবেন না।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ পুলিশের প্রকৃত সদস্যরা কখনোই এভাবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে অর্থ দাবি করেন না। প্রতিটি পুলিশি কার্যক্রম একটি নির্দিষ্ট নিয়ম ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাই যদি কেউ পুলিশের পরিচয় দিয়ে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করে, তাহলে বুঝতে হবে এটি একটি প্রতারণামূলক কাজ।”
পুলিশ সদর দপ্তর সবাইকে এ ধরনের জালিয়াতি থেকে রক্ষা পেতে নিচের কিছু বিষয় মেনে চলার আহ্বান জানায়:
বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব। এই উদ্দেশ্যে পুলিশ বাহিনী প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দমন এবং প্রতারকদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করছে। এছাড়া যারা ইতোমধ্যেই প্রতারণার শিকার হয়েছেন, তাদেরকে যথাযথ আইনগত সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে হয়রানির চেষ্টা করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
পুলিশের পক্ষ থেকে আবারও পুনরায় বলা হয়, “জনগণের সহযোগিতা ছাড়া প্রতারণার এই আধুনিক কৌশলের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে লড়াই করা সম্ভব নয়। তাই যদি কারও কাছে এমন কোনো প্রতারণার তথ্য থাকে, তাহলে দয়া করে নিকটস্থ থানায় জানান অথবা পুলিশের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, হটলাইন বা ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করুন।”
সর্বশেষে, এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, জনগণ সচেতন হলে এই প্রতারণার ফাঁদ থেকে তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন এবং প্রতারকচক্রও দ্রুত আইনের আওতায় আসবে।”
এটি পুলিশের পক্ষ থেকে একটি জরুরি ও সময়োপযোগী সতর্কবার্তা। এই বার্তার মূল উদ্দেশ্য হলো জনগণকে সচেতন করে তোলা এবং প্রতারণার সম্ভাব্য ঝুঁকি থেকে মুক্ত রাখা।