প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে সর্বদলীয় বৈঠকের অংশ হিসেবে ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’ (এবি পার্টি) সম্প্রতি তার সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়। রোববার রাতে দলটির চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এই বৈঠকে অংশ নেয়। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির অবস্থা এবং বিশেষভাবে উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে এই বৈঠকে বিশদ আলোচনা হয়।
বৈঠকে মঞ্জু বলেন, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করেও উর্দুভাষী জনগোষ্ঠী এখনো নানান মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। শিক্ষা, বাসস্থান, নাগরিক সুবিধা ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণসহ নানা ক্ষেত্রে তাদের দাবিদাওয়া আজও পূরণ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সরকারকে আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ—যে ভাষাই তারা বলুক না কেন—সমানভাবে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা ও সুযোগ পাওয়ার অধিকার রাখে। সমাজের সকল স্তরের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেই একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন সম্ভব।
আলোচনার একপর্যায়ে মঞ্জু আরও বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। যদি বর্তমান সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়, তাহলে তা হবে জাতির জন্য এক গভীর ও ঐতিহাসিক পরাজয়। তিনি ড. ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনি একমাত্র বাংলাদেশি নোবেল বিজয়ী হিসেবে বিশ্বজুড়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এই সময় আপনার অবস্থান, নেতৃত্ব এবং প্রতিশ্রুতি আরও সুসংগঠিত ও প্রভাবশালী হওয়া প্রয়োজন।” তিনি আহ্বান জানান, সকল রাজনৈতিক মতপার্থক্য, ব্যক্তি স্বার্থ ও মান-অভিমান দূরে রেখে একটি জাতিগত ঐক্য গড়ে তোলার।
তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি আমরা বিভক্ত থাকি তবে পরাজিত ফ্যাসিবাদ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তাতে শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নয়, সীমান্তের বাইরের আগ্রাসী শক্তিগুলোর স্বপ্নও বাস্তবায়নের সুযোগ পাবে। তাই এখনই সময় নিজেদের বিভাজন ভুলে গিয়ে এক অভিন্ন জাতীয় চেতনাকে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়ার।
বৈঠকে এবি পার্টি স্পষ্ট করে দেয় যে, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম—বিশেষ করে তরুণ সমাজ—এই মুহূর্তে চরমভাবে আশাহত ও বিভ্রান্ত। তাদেরকে আশার আলো দেখানো, একটি উদার, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। শহীদের রক্ত, দেশের স্বাধীনতা আর মানুষের আত্মত্যাগকে যথাযথ সম্মান জানাতে হলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
বৈঠক শেষে দেওয়া বিবৃতিতে এবি পার্টি জানায়, তারা সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে বিশ্বাসী। দলটি মনে করে, জাতির এই কঠিন সময়ে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য তারা দেশের বুদ্ধিজীবী, নাগরিক সমাজ এবং রাজনীতিকদের সক্রিয় ভূমিকা কামনা করে।