চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনএমসিটি) বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আয়োজিত এক সভায় বক্তারা সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন—যদি এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তবে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘দেশ বাঁচাও, বন্দর বাঁচাও আন্দোলন’ আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, “দেশে দুর্নীতি আগের চেয়ে আরও বেড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার আগের দুর্নীতিবাজদের ধরে রাখতে চায় না, বিচার তো দূরের কথা। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো চট্টগ্রাম বন্দর ও সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষা করা।”
বন্দর পরিচালনার ক্ষেত্রে বিদেশি কোম্পানির উপর নির্ভরতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন গয়েশ্বর। তিনি বলেন, “যদি বন্দর পরিচালনায় দেশীয় জনবল না থাকে, তবে প্রয়োজনীয় বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। তবে পুরো বন্দর কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়া চলবে না।” তিনি আরও বলেন, “আমরা ৩১ দফা নিয়ে আন্দোলনে আছি। সবাই সংস্কারের ব্যাপারে একমত। এখন শুধু ঐক্যবদ্ধভাবে চাপ সৃষ্টি করতে হবে।”
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান ও আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক শাহাদাত হোসেন সেলিম। সভা সঞ্চালনা করেন এলডিপির মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটু।
বক্তারা বলেন, সরকারের বর্তমান অন্তর্বর্তী চরিত্র বিবেচনায় নিয়ে তারা যেন চট্টগ্রাম বন্দরসহ জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত না নেন। বরং অবিলম্বে নির্বাচনকালীন রোডম্যাপ ঘোষণা করে একটি গ্রহণযোগ্য সরকারের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করা উচিত।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, “নয় মাসে একজন দুর্নীতিবাজেরও বিচার হয়নি। এখন আবার চট্টগ্রাম বন্দর লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই—বন্দর কোনো বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার সুযোগ নেই। দেশের মেধাবী কর্মকর্তাদের মাধ্যমেই বন্দর পরিচালিত হতে হবে।”
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “বন্দর জাতীয় সম্পদ। এটি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় গণশুনানি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে এ ধরনের বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার বর্তমান সরকারের নেই।”
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “আমরা বন্দর লিজ দেয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছি। সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই—তাদের মূল কাজ হলো গণহত্যার বিচার, আহতদের চিকিৎসা, নিহতদের ক্ষতিপূরণ এবং নির্বাচন আয়োজন। করিডোর বা বন্দর লিজ দেয়া তাঁদের কাজ নয়।”
বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “দেশকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে হলে সরকারকে সৎ হতে হবে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হেয় না করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।”
সভায় আরও বক্তব্য দেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নূর, আমজনতা পার্টির সাধারণ সম্পাদক তারেক রহমান প্রমুখ।
সভায় বক্তারা দাবি করেন, সরকার গোপনে একাধিক সংস্থার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের কাছে তুলে দিতে চায়। বক্তারা অভিযোগ করেন, সাবের হোসেন চৌধুরীর মাধ্যমে এই চুক্তির প্রস্তুতি চলছে, যেখানে আগে সালমান এফ রহমানও জড়িত ছিলেন। শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুলের জামাই দুবাইয়ে গ্রেফতার হওয়ার সময়ও এই কোম্পানিকে সুবিধা দিতে চেষ্টার অভিযোগ তোলেন শাহাদাত হোসেন সেলিম।
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, “আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ ও জাতির স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবো। সরকার যদি চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তাহলে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
সভায় উপস্থিত বক্তারা মনে করেন, বন্দর জাতীয় সম্পদ এবং অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। এটি কোনো ব্যক্তিগত বা দলের সম্পত্তি নয় যে যেকোনো সিদ্ধান্তে তুলে দেওয়া যাবে। দেশের জনগণকে নিয়ে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যাতে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অর্থনৈতিক।