বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে বিদ্যমান আন্তঃক্যাডার বৈষম্যের প্রতিবাদে সারাদেশে কলমবিরতি পালন করেছেন ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’-এর আহ্বানে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তারা কলমবিরতিতে অংশগ্রহণ করেন। যদিও হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ অন্যান্য জরুরি সেবা এই কর্মসূচির আওতাভুক্ত ছিল না, তবে কর্মসূচির প্রভাব সরকারি কর্মকাণ্ডে স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়েছে।
এই কর্মসূচির মূল প্রেক্ষাপটে রয়েছে প্রশাসন ক্যাডারের পক্ষপাতমূলক আচরণ ও দায়িত্বশীলতার অভাব। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে মন্ত্রণালয় চত্বরে মারামারি, মিছিল ও শোডাউনের মতো কর্মকাণ্ড চালালেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বিপরীতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবাদী লেখালেখির কারণে ২৫টি ক্যাডারের ১২ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়াও, আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
পরিষদের অভিযোগ, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের কার্যক্রমও পক্ষপাতদুষ্ট। কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী উপসচিব পুলে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০% কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে, আর বাকি ২৫টি ক্যাডারের জন্য বাকি ৫০% অংশে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে পরিষদ ‘জুলাই বিপ্লবের’ চেতনার পরিপন্থী বলে মনে করে। এছাড়া, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিসংখ্যান, কাস্টমস, ট্যাক্সসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্যাডারে অযৌক্তিক জটিলতা সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পরিষদ জানায়, তারা শুরু থেকেই জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জাতীয় পর্যায়ে সেমিনার, গোলটেবিল বৈঠক ও আলোচনা সভার মাধ্যমে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে ‘কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা’, ‘ডিএস পুলের কোটা বাতিল’ এবং ‘সকল ক্যাডারের সমতা বিধান’—এই তিনটি মূল দাবির ভিত্তিতে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। এসব দাবি সংস্কার কমিশনে উপস্থাপন করা হলেও যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
পরিষদের আন্দোলন শুধু কলমবিরতিতে সীমাবদ্ধ নয়। এর আগে, ২০ মে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে বিকাল ৫টা ১০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এই আন্দোলন ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে এবং আগামীকাল বুধবারও সারা দেশে একই সময়ে একই কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য সরকারবিরোধিতা নয়, বরং একটি সমতাভিত্তিক, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক সিভিল সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করা। এ লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন মহলের হস্তক্ষেপ ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। আন্তঃক্যাডার বৈষম্যের নিরসন না হলে প্রশাসনিক ভারসাম্য ও কর্মপরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হতে পারে বলে পরিষদ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।