বাংলাদেশ গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ দাবি করেছে যে, প্রায় শতভাগ কারখানায় ঈদের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে। সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী, তাদের ২,১০৭টি সদস্য কারখানার মধ্যে মাত্র ৭টি এখনো বেতন ও বোনাস পরিশোধ করেনি। তবে এই কারখানাগুলোর শ্রমিকরা এখনো বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে শ্রম ভবনের সামনে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শ্রম ভবনের কর্মকর্তারা সরকারি ছুটির দিনেও জরুরি বৈঠক করেছেন।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, বেতন পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কারখানার শীর্ষ তিনজন কর্মকর্তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে রাখা হবে এবং শ্রমিকদের বেতন বাবদ ৩ কোটি টাকা দেওয়া হবে।
টিএনজেড অ্যাপারেলসের এক শ্রমিক নাজমুল মিয়া জানান, গত তিন মাসের বেতন তারা পাননি, যদিও কারখানায় কাজ চালু রয়েছে। মালিক দেশে না থেকে সৌদি আরব ও কানাডায় ব্যবসা পরিচালনা করছেন। কোয়ালিটি কন্ট্রোলার হিসেবে ১১ বছর ধরে কাজ করা সুমন আহমেদ জানান, গত তিন বছর ধরে বেতন ও ভাতা নিয়ে অনিশ্চয়তা চলছে। অনেক শ্রমিক ধার করে বা গ্রামের বাড়ি থেকে টাকা এনে সংসার চালাচ্ছেন। আরেক শ্রমিক সাদিকুর রহমান বলেন, নির্ধারিত সময়ের পরে বেতন পেলেও তা আদায় করতে আন্দোলন করতে হয়। কারও দুই মাস, কারও তিন মাসের বেতন বকেয়া, এমনকি ২০২৩ সালের বেতনও এখনো পরিশোধ হয়নি।
টিএনজেড গ্রুপের তিনটি কারখানার বেতন পরিশোধ ইস্যুতে শ্রম ভবনে শ্রম সচিবের নেতৃত্বে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে কারখানার প্রতিনিধি ও শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে শ্রম সচিব জানান, টিএনজেডের মালিকরা কিছু মেশিন বিক্রি করে ৩ কোটি টাকা সংগ্রহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং এই টাকা শ্রমিকদের বিকাশ একাউন্টে পাঠানো হবে। তবে শ্রমিকরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বিক্ষোভরত শ্রমিকরা জানিয়ে দিয়েছেন, তারা তাদের পূর্ণ পাওনা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন, এমনকি প্রয়োজনে ঈদের দিনও শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান নেবেন। টিএনজেড গ্রুপের মালিক বিদেশে অবস্থান করায় তার দেশে ফিরে না আসা পর্যন্ত গ্রুপ ডিরেক্টর শরিফুল ইসলাম শামিন, নির্বাহী পরিচালক আলী হোসেন এবং গ্রুপ সিএইচও এনামুল হককে হেফাজতে রাখা হবে।
টিএনজেড গ্রুপের তিনটি ইউনিট—টিএনজেড অ্যাপারেল, অ্যাপারেল ইকো প্লাস ও অ্যাপারেল আর্টে প্রায় ৩ হাজার শ্রমিকের ১৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে, যার মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ১ কোটি ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
শ্রমিক নেতারা বলছেন, বিজিএমইএ প্রায় শতভাগ কারখানায় বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবি করলেও বাস্তবতা ভিন্ন। অনেক শ্রমিক এখনো বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা অভিযোগ করেন, শ্রম মন্ত্রণালয় শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়নি এবং বরাবরের মতো মালিকদের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে।
বিজিএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী, যেসব কারখানা এখনো শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করেনি, সেগুলো হলো—টিএনজেড অ্যাপারেলস, অ্যাপারেলস প্লাস ইকো লিমিটেড, বেসিক ক্লোথিং, বেসিক নিট লিমিটেড, সাইন অ্যাপারেলস, হাগ অ্যাপারেল ও রোয়ার ফ্যাশন লিমিটেড।
কারখানার ঈদ বেতন বিজিএমইএ