বাংলাদেশে জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ ও তালাক নিবন্ধনের ক্ষেত্রে নাগরিকদের নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। যদিও দেশে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সংক্রান্ত আইন ও বিধিতে জন্ম-মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তবুও বেশিরভাগ মানুষই এ আইন সম্পর্কে জানেন না। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধনের হার এক শতাংশেরও কম, আর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধনের হার মাত্র ৫৪ শতাংশ।
এই বিষয়ে বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘ডিসেমিনেটিং ইনফরমেশন অন সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস (সিআরভিএস)’ শীর্ষক কর্মশালায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। কর্মশালাটি যৌথভাবে আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নারী মৈত্রী এবং গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে বিদ্যমান সমস্যা
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আক্তার ডলি বলেন, এখনও বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। যদিও ১৬ কোটির বেশি মানুষের জন্ম ও মৃত্যুর তথ্য সংরক্ষিত আছে এবং প্রতিনিয়ত এ সংখ্যা বাড়ছে। তবে নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় অসংগতি রয়ে গেছে। অনেকে ইচ্ছামতো জন্ম নিবন্ধন করতে পারছেন এবং একই ব্যক্তির একাধিক তারিখে জন্ম নিবন্ধন করার ঘটনা ঘটছে, যা জটিলতা সৃষ্টি করছে।
মৃত্যু নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও নানা চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। যথাযথ আইন থাকলেও প্রক্রিয়াটি জটিল হওয়ায় সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হন। সাংস্কৃতিক বিশ্বাস, দাফন প্রথা, প্রশাসনিক জটিলতা এবং দীর্ঘ আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতি মৃত্যু নিবন্ধনে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে।
গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন অত্যন্ত জরুরি। জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যেই শিশুর জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক হলেও বেশিরভাগ মানুষ তা অনুসরণ করে না। তিনি আরও বলেন, “যদি জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন নিয়মিতভাবে করা যায়, তাহলে প্রতি দশ বছর পরপর জনশুমারি করার প্রয়োজন হবে না। শুধুমাত্র নিবন্ধন পরিসংখ্যান থেকেই জানা যাবে বছরে কতজন জন্মগ্রহণ করেছে এবং কতজনের মৃত্যু হয়েছে।”
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সহজীকরণে সুপারিশ
কর্মশালায় আলোচকরা ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা বিধিমালার কথা উল্লেখ করেন, যা জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে সহজ করেছে। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, জন্ম বা মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে বিনামূল্যে নিবন্ধন করার সুযোগ রয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সাধারণত হাসপাতাল কেন্দ্রিক হওয়ায় এ সংক্রান্ত তথ্য দ্রুত সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়। বাংলাদেশেও এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে নিবন্ধন প্রক্রিয়া আরও কার্যকর হবে।
এ বিষয়ে কর্মশালায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়:
1. রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের পরিবর্তে হাসপাতাল থেকেই জন্ম ও মৃত্যুর তথ্য সংশ্লিষ্ট নিবন্ধকের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করা।
2. জন্ম ও মৃত্যুর তথ্যদাতার সহযোগীদের নিবন্ধন বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা।
3. নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও হয়রানিমুক্ত করা।
কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন সিআরভিএসের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর নজরুল ইসলাম, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রাক্তন অতিরিক্ত সচিব মঈন উদ্দিন এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি প্রমুখ।
সঠিকভাবে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করতে নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজ করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন বক্তারা।