বর্তমান বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) দ্রুত বিকাশ ও সামাজিক ব্যবস্থার বিবর্তন একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত হয়ে পড়েছে। প্রযুক্তি যেমন সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সহজ করে তুলছে, তেমনি সঠিক নীতির অভাবে এর নেতিবাচক প্রতিফলনও দৃশ্যমান হচ্ছে। ব্যবসা, স্বাস্থ্য ও সমাজ—তিন ক্ষেত্রেই বর্তমানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের প্রমাণ আমরা পাচ্ছি। এই প্রতিবেদন বিভিন্ন অঞ্চলের সাম্প্রতিক উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জকে একত্রে পর্যালোচনা করে একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরছে।
Nextdoor-এর CEO নিরাভ টোলিয়া Cannes Lions ফেস্টিভ্যালে তার মতাদর্শিক অবস্থান প্রকাশ করেন—AI কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কনটেন্ট লাইসেন্সিং না করার সিদ্ধান্ত তিনি কেবল ব্যবসায়িক ঝুঁকি থেকে নয়, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে নিয়েছেন। Google-এর উপর নির্ভরতার কারণে তার আগের কোম্পানি Shopping.com ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তিনি এখন এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চাচ্ছেন যা স্বনির্ভর এবং ডেটা স্ক্র্যাপিং প্রতিরোধে সচেষ্ট।
Nextdoor AI প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চায় নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে, কিন্তু বাইরের কোম্পানিগুলোর কাছে তথ্য হস্তান্তর না করে—এটি এক নতুন ধরনের স্থানীয় এজেন্ট তৈরির পরিকল্পনা করছে, যারা ব্যবহারকারীদের নিজ এলাকায় খাদ্য, সেবা বা অনুষ্ঠান সম্পর্কে তথ্য দিতে পারবে।
Elsevier প্রকাশিত সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখানো হয়েছে কিভাবে transformer-based deep learning ব্যবহার করে ১৯৮০ থেকে ২০২১ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ডেটা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই গবেষণাটি দেখিয়েছে—
অগ্রসর দেশগুলোতেও স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতা রয়েছে।
DALY (Disability-Adjusted Life Years) ভিত্তিক বৈষম্য ৬২.৫৫% বৃদ্ধি পেয়েছে ১৯৯০ থেকে ২০২১-এর মধ্যে।
শুধুমাত্র আয় বা SDI (Sociodemographic Index) নয়, বরং রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যনীতি যেমন—জাপানের আগাম রোগ নির্ণয় কর্মসূচি ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস—এইসব বিষয় দীর্ঘমেয়াদে রোগ কমাতে কার্যকর হয়েছে।
AI প্রযুক্তির সাহায্যে প্রথমবারের মতো এত স্পষ্টভাবে ভবিষ্যতের রোগ প্রক্ষেপণ এবং কার্যকর নীতির প্রভাব পরিমাপ সম্ভব হয়েছে।
মধ্যপ্রদেশে পরিবার পরিকল্পনায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। NFHS-4 থেকে NFHS-5 পর্যন্ত অস্থায়ী গর্ভনিরোধক ব্যবহারে ৬.৯% থেকে ১২.৯% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। Vikalp প্রজেক্টের মাধ্যমে স্থানীয় কমিউনিটি প্ল্যাটফর্মে সচেতনতা গড়ে তোলা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সন্তান জন্মদানে বিলম্ব ও সন্তানদের মধ্যে ব্যবধান—
মা ও শিশুর স্বাস্থ্য উন্নত করে
অর্থনৈতিক ও পেশাগত প্রস্তুতির সুযোগ দেয়
এই ধরণের উদ্যোগ সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, বিশেষ করে তরুণ দম্পতিদের মধ্যে।
একইসঙ্গে, Devdiscourse একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে তুলে ধরেছে ডোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারের প্রভাব। এটি আমাদের আনন্দ, অভ্যাস, ও মোটিভেশনের সঙ্গে সম্পর্কিত। আধুনিক জীবনে সোশ্যাল মিডিয়া ও গেমিং এর মতো কার্যকলাপ ডোপামিন-নির্ভর আসক্তির জন্ম দিতে পারে। তবে ভালো বিকল্পও আছে—ব্যায়াম, সঙ্গীত, সামাজিক মেলামেশা ডোপামিন বাড়াতে সাহায্য করে স্বাস্থ্যকরভাবে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো চীনের সঙ্গে ১৪টি চুক্তির মাধ্যমে $১৮.৩ বিলিয়ন বিনিয়োগ করেছে নতুন ড্রাগ মলিকিউল লাইসেন্সিংয়ে। এই পরিবর্তন স্পষ্ট করে যে, মার্কিন কোম্পানিগুলো চীনের বাজারকে আগামীর মেডিসিন উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে।
তবে একই সময়, UN-এর রিপোর্ট অনুযায়ী Gaza ও Sudan-এ তীব্র খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা রয়েছে। যুদ্ধ, জলবায়ু, এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা—এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
বর্তমান বিশ্বের সামাজিক নীতি, স্বাস্থ্যনীতি ও প্রযুক্তির নানামুখী উন্নয়ন এবং দৃষ্টিভঙ্গির সংঘাতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে—যেখানে নেতৃত্বদানের দৃষ্টিভঙ্গি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-এর ব্যবহার, জনস্বাস্থ্য গবেষণা, পরিবার পরিকল্পনার সচেতনতা এবং বৈশ্বিক সহযোগিতা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে।
Nextdoor-এর CEO, নিরাভ টোলিয়া, সম্প্রতি ক্যানস লায়নস ফেস্টিভ্যালে এক সাক্ষাৎকারে জানান যে, তিনি কোনোভাবেই তাঁর প্ল্যাটফর্মের কনটেন্ট বড় AI কোম্পানিগুলোর হাতে তুলে দিতে চান না। Reddit কিংবা Axel Springer-এর মতো কোম্পানিগুলো যখন গুগলের সাথে কনটেন্ট লাইসেন্সিং চুক্তি করে AI মডেল ট্রেইনিংয়ের জন্য, তখন Nextdoor সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে হাঁটছে—’ব্লকিং’।
টোলিয়া জানান, “আমরা কখনোই আমাদের কনটেন্ট স্ক্র্যাপ করতে দিই না বা সার্চ ইঞ্জিন দ্বারা ক্রল হতে দিই না। কারণ আমরা চাই না ব্যবহারকারীরা আমাদের বদলে ChatGPT বা গুগলে গিয়ে তথ্য খুঁজে পাক।”
তিনি আরও বলেন, Shopping.com-এ তাঁর পূর্বের অভিজ্ঞতা তাঁকে শিখিয়েছে যে Big Tech-এর উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা শেষ পর্যন্ত ক্ষতির কারণ হয়। Nextdoor এখন নিজস্ব AI এজেন্ট তৈরি করছে যা লোকাল রিভিউয়ের ভিত্তিতে ব্যবহারকারীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে, যেমন “লন্ডনের মেরিলেবোন এলাকায় ভালো টিক্কা মাসালা কোথায় মেলে?”
Elsevier-এর প্রকাশিত একটি AI-চালিত বৈশ্বিক গবেষণা দেখিয়েছে কিভাবে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (RA)-এর বোঝা বিশ্বজুড়ে ভিন্ন মাত্রায় বাড়ছে। এই গবেষণায় ৯৫৩টি স্থান নিয়ে ১৯৮০ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, RA-এর ক্ষেত্রে বয়সজনিত পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অসম স্বাস্থ্য পরিকাঠামো বড় ভূমিকা রাখছে।
গবেষণা থেকে জানা যায়:
২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি RA প্রভাবিত অঞ্চল ছিল যুক্তরাজ্যের West Berkshire (৩৫.১/১ লক্ষ ইনসিডেন্স) এবং মেক্সিকোর Zacatecas (১১২.৬/১ লক্ষ DALY)।
অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশগুলোতে অসমতাও বাড়ছে, যার ফলে RA নিয়ে চিকিৎসার বৈষম্য প্রকট হয়ে উঠেছে।
উচ্চ SDI অঞ্চল যেমন জাপান, সময়মতো ডায়াগনোসিস ও খাদ্যাভ্যাসের জন্য RA বোঝা কমাতে সক্ষম হয়েছে।
প্রধান গবেষকরা বলছেন, “AI-এর মাধ্যমে আমরা এমন স্পষ্ট ও নীতিনির্ধারক উপাত্ত পেয়েছি যা স্বাস্থ্য নীতিতে বিপ্লব আনতে পারে।”
ভারতের মধ্যপ্রদেশে Vikalp প্রকল্পের মাধ্যমে সম্প্রতি পরিবার পরিকল্পনার সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে। বিশেষ করে অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে—NFHS-৪ অনুসারে ৬.৯% থেকে বেড়ে NFHS-৫-এ ১২.৯% হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম সন্তানের জন্ম দুই বছর বিলম্ব করলে মায়ের ও শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে এবং দম্পতিরা আর্থিক ও পেশাগতভাবে প্রস্তুত হতে পারেন। Vikalp প্রকল্প সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে গ্রাম্য সম্প্রদায়ের মধ্যে তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে।
প্রকল্পের পরিচালক রিশা কুশওহা বলেন, “শুধু স্বাস্থ্য নয়, সন্তানের মধ্যে ব্যবধান তৈরি করলে পরিবারের সামগ্রিক কল্যাণ বৃদ্ধি পায়।”
অন্যদিকে, Devdiscourse এর আরেক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ডোপামিন—আমাদের আনন্দ ও প্রেরণার মূল নিউরোট্রান্সমিটার—যদিও আমাদের জীবন বাঁচাতে সহায়ক, কিন্তু আধুনিক সময়ের সোশ্যাল মিডিয়া, গেমিং বা গ্যাম্বলিং আচরণকে আসক্তিতে পরিণত করতে পারে।
তবে, স্বাস্থ্যকর বিকল্প যেমন ব্যায়াম, সংগীত, বা সামাজিক মেলামেশা স্বাভাবিকভাবে ডোপামিন বাড়িয়ে আনন্দ দেয়, যা আমাদের ফোকাস ও মোটিভেশন বজায় রাখতে সাহায্য করে।
আমেরিকান ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো চীনের সঙ্গে $১৮.৩ বিলিয়ন মূল্যের ১৪টি চুক্তি করেছে যা ভবিষ্যতের ওষুধ বাজারে প্রভাব ফেলবে। একই সময়ে Purdue Pharma এর $৭.৪ বিলিয়ন অপিওয়েড সঙ্কট নিয়ে মীমাংসা পেয়েছে ব্যাপক সমর্থন।
তবে, ইউনাইটেড নেশনের এক রিপোর্ট বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার্ত অঞ্চলগুলোর জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছে—বিশেষ করে গাজা ও সুদানের মতন অঞ্চলে, যেখানে সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।
এই সব খবর ও বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায়, বিশ্ব আজ এক রূপান্তরধর্মী যুগে প্রবেশ করছে—যেখানে প্রযুক্তির প্রভাব, নেতৃত্বের আদর্শ, জনস্বাস্থ্য নীতি এবং ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত একসাথে মানবজীবনের গঠনকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে।
Nextdoor-এর মতো কোম্পানির কৌশল, ভারতের পরিবার পরিকল্পনা সচেতনতা, AI-চালিত স্বাস্থ্য গবেষণা বা ফার্মাসিউটিক্যাল চুক্তি—সবকিছুই ইঙ্গিত দেয়, ভবিষ্যত কেবল প্রযুক্তিনির্ভর নয়, নীতিনির্ভরও হতে চলেছে।
বর্তমান বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) দ্রুত বিকাশ করছে এবং সামাজিক ব্যবস্থার বিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রযুক্তির এই অগ্রগতি শুধু সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে সহজ করছে না, বরং স্বাস্থ্য, ব্যবসা ও সমাজের নানা ক্ষেত্রে বিশাল পরিবর্তনের সূচনা করছে। তবে, সঠিক নীতিমালা না থাকলে এর নেতিবাচক প্রভাবও দেখা দেয়।
Nextdoor-এর CEO নিরাভ টোলিয়া সম্প্রতি ক্যানস লায়নস ফেস্টিভ্যালে বলেন, তারা কোনোভাবেই তাদের কনটেন্ট বড় AI কোম্পানিগুলোর হাতে দিতে চান না। এটি একটি নৈতিক ও ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এর প্রয়োগে ব্যবহারকারীদের তথ্য সুরক্ষিত রাখার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। Nextdoor নিজস্ব AI এজেন্ট তৈরি করছে, যা স্থানীয় তথ্য সরবরাহ করবে, কিন্তু বাইরের কোম্পানির কাছে তথ্য হস্তান্তর করবে না।
Elsevier-এর একটি গবেষণায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ডেটা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই গবেষণায় দেখা গেছে, কিভাবে AI ভিত্তিক মডেলগুলো স্বাস্থ্যনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করছে এবং দীর্ঘমেয়াদে রোগ নির্ণয় ও ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করছে।
ভারতের মধ্যপ্রদেশে পরিবার পরিকল্পনা এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর তথ্য প্ল্যাটফর্ম Vikalp-এর ভূমিকা ইতিবাচক। এই ধরনের AI-চালিত উদ্যোগ সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হচ্ছে, বিশেষ করে অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবহারে।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংকট যেমন খাদ্য সংকট, স্বাস্থ্য সমস্যা ও তথ্য নিরাপত্তায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একাধিক নতুন সমাধান ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করছে। এই প্রযুক্তি আমাদেরকে একটি নিরাপদ ও উন্নত সমাজের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমান বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধু একটি প্রযুক্তিগত উন্নতি নয়, বরং সামাজিক, স্বাস্থ্য ও ব্যবসায়িক নীতির পুনর্গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে AI-নির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নীতিমালা আমাদের জীবনযাত্রার নতুন মানদণ্ড স্থাপন করবে।