ঈশ্বরদীর বালুমহাল নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ৭, উত্তেজনা থেমেছে পুলিশের হস্তক্ষেপে
পাবনার ঈশ্বরদীতে পদ্মা নদীর চরের বালুমহালের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (২২ মে ২০২৫) সকালে সাঁড়া ঘাট এলাকায় এই সংঘর্ষে ৭ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদী উপজেলার পদ্মা নদীর সাঁড়া অংশে দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন নিয়ে বিরোধ চলছিল। এই এলাকায় বালুমহালের ইজারাদার হলেন যুবদল নেতা সুলতান আলী বিশ্বাস টনি, যিনি বৈধ লাইসেন্সধারী বলে দাবি করেছেন। অন্যদিকে নদীর লালপুর চরের অংশে বালু তোলার ইজারা রয়েছে মোল্লা ট্রেডার্স নামক একটি প্রতিষ্ঠানের, যার মালিক শহিদুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার সকালে ঈশ্বরদীর পক্ষের শ্রমিকরা বালু উত্তোলনে গেলে, বিপরীত দিক থেকে অস্ত্রধারীরা হঠাৎ হামলা চালায় বলে দাবি করেন সুলতান আলী বিশ্বাস টনি। তিনি জানান, তিনটি নৌকায় করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এসে নিরস্ত্র শ্রমিকদের ওপর গুলি চালায়। এতে ৭ জন গুলিবিদ্ধ হন এবং আরও কয়েকজন আহত হন। আহতদের মধ্যে সেলিম আহমেদ ও সৈকত ইসলামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকি আহতরা ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
গুলিবিদ্ধদের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন—রূপপুর গ্রামের রেজাউল হক লালু, তালতলা এলাকার সানাউল্লাহ প্রামাণিক, তিন বটতলা এলাকার চপল হোসেন কালু, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার চাঁদগ্রাম এলাকার সেলিম আহমেদ ও সৈকত ইসলাম, গোলাপনগর গ্রামের রিপন হোসেন এবং শাহীন আলমের ছেলে রাসেল।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী লক্ষীকুন্ডা নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এমরান মাহমুদ তুহিন জানান, সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় সাতজন আহত হয়েছেন। পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং এখন সেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। ঈশ্বরদী থানার তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে এবং লিখিত অভিযোগ পেলে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, পদ্মা নদীর বিভিন্ন চরে বালুমহালকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরেই নানা উত্তেজনা বিরাজ করছে। কিছুদিন পরপরই এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। ইজারাদারদের মধ্যে রাজনৈতিক পরিচিতি এবং ক্ষমতার বলয় থাকায় প্রায়ই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা নিয়ে দণ্ড-প্রতিদণ্ড দেখা যায়। বালুমহাল থেকে সরকার রাজস্ব পেলেও সঠিক তদারকির অভাবে তা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নিচ্ছে।
এদিকে বালুমহালের ইজারাদার সুলতান আলী বিশ্বাস টনি দাবি করেন, বিআইডাব্লিউটিএ কর্তৃক লাইসেন্সপ্রাপ্ত হিসেবে তিনি সম্পূর্ণ আইনানুগভাবে বালু উত্তোলনের কাজ করছেন। তিনি জানান, হাইড্রোগ্রাফিক চার্ট অনুযায়ী চিহ্নিত স্থান থেকেই বালু তোলা হচ্ছে এবং জেলা প্রশাসকও তাদের কার্যক্রমের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সহায়তা করতে চিঠি দিয়েছেন।
এই বিষয়ে প্রতিপক্ষ শহিদুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ফলে ঘটনার উভয় দিকের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ পাওয়া সম্ভব হয়নি।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, পুলিশ পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। তবে এ ধরনের সংঘর্ষ ভবিষ্যতে এড়াতে স্থানীয় প্রশাসনকে আরো সক্রিয়ভাবে তদারকি ও আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির তাগিদ দিয়েছেন স্থানীয়রা। নদীভিত্তিক সম্পদের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রবণতা ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের কারণে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে বলেও মত প্রকাশ করেন এলাকাবাসী।
এই ঘটনায় প্রশাসন কত দ্রুত ও কার্যকরভাবে ব্যবস্থা নেয়, তার উপরই নির্ভর করছে স্থানীয় শান্তি-শৃঙ্খলার ভবিষ্যৎ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হচ্ছে, অবিলম্বে লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করে দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে।