নানাবিধ প্রতিকূলতার মধ্যে রাজধানীবাসী গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড গরমে চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছিল। গ্রীষ্মের দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকেই স্বস্তির বৃষ্টির অপেক্ষায় ছিলেন। অবশেষে সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বুধবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি অঞ্চলে স্বস্তিদায়ক বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে জনজীবনে কিছুটা প্রশান্তি ফিরে এসেছে।
বুধবার দুপুর ২টার পর থেকেই ঢাকার আকাশ মেঘে ঢেকে যায়। হঠাৎ করেই বইতে শুরু করে ঠাণ্ডা হাওয়া, যা কিছুটা হিমেল অনুভূতি এনে দেয়। এর কিছুক্ষণ পর, অর্থাৎ বেলা ৩টার কাছাকাছি সময় থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়। প্রায় ৩০ মিনিট স্থায়ী এই বৃষ্টিতে অনেকের মধ্যে দীর্ঘদিনের গরমের কষ্ট লাঘবের অনুভূতি ফিরে আসে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তন মানুষকে যেন নতুন করে প্রাণ জোগায়।
বৃষ্টির বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির জানান, বুধবার বেলা ৩টা পর্যন্ত ঢাকায় ২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হলেও, এরপরও আরও কিছু সময় বৃষ্টি হয়। শুধু রাজধানী নয়, ঢাকার বাইরেও সিলেট ও কুমিল্লা অঞ্চলে বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। দেশের অন্যান্য কিছু অঞ্চলেও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এই কারণেই মে মাসজুড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কখনো অতিরিক্ত গরম, আবার কখনো হালকা বৃষ্টিপাত—এমন বিরূপ আবহাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে সাধারণ মানুষকে এই সময়ে আবহাওয়ার তারতম্যের প্রতি সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টিও হতে পারে, যা কৃষিকাজের জন্য কিছুটা ক্ষতিকর হলেও জনজীবনের জন্য স্বস্তিদায়ক হতে পারে।
এদিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপপ্রবাহও অব্যাহত রয়েছে। রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, ঢাকা, টাংগাইল, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও পটুয়াখালীসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে যেসব এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে, সেখানে তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংজ্ঞা অনুযায়ী, তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৩৯.৯ হলে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১.৯ ডিগ্রি হলে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। ৪২ ডিগ্রি বা তার বেশি তাপমাত্রাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়।
সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাত রাজধানীবাসীর মাঝে সাময়িক স্বস্তি নিয়ে এলেও, গরমের প্রকোপ একেবারে কমে গেছে বলা যাবে না। তবে এই বৃষ্টির ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আগামী দিনগুলোতে তাপপ্রবাহ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা জনসাধারণের জন্য সুখবর হতে পারে।