বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “আমরা মজলুম হতে পারি, কিন্তু কখনো জালেম হবো না।” তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামী প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না বরং সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রচলিত অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।”
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মগবাজারে আল ফালাহ মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত থানা মজলিসে শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্যদের শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “জামায়াত কেবল নির্বাচন বা ভোটকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল নয়। এটি একটি আদর্শভিত্তিক আন্দোলন, যার মূল লক্ষ্য সমাজের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন এবং একটি ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন। আমরা গণতান্ত্রিক পন্থায় রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চাই।”
স্রোতের বিপরীতে পথচলা
জামায়াত আমির বলেন, “আমরা এমন একটি রাষ্ট্র কাঠামো গঠন করতে চাই যেখানে সকল নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে, মানুষে মানুষে কোনো বৈষম্য বা ভেদাভেদ থাকবে না। কিন্তু যারা অতীতে ক্ষমতায় ছিল, তারা আত্মস্বার্থ, গোষ্ঠীগত স্বার্থ এবং রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করতে রাষ্ট্রক্ষমতাকে ব্যবহার করেছে।”
তিনি বলেন, “এই কারণেই জামায়াত সবসময় স্রোতের বিপরীতে কাজ করেছে। আমাদের অনেক ভাই শহীদ হয়েছেন, অনেকেই পরিবার হারিয়েছেন। তারপরও আমরা আমাদের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হইনি। আমরা জানি, সত্যের পথে চলতে হলে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।”
নির্যাতনেও পিছপা নয় জামায়াত
ডা. শফিকুর রহমান কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “যেকোনো জুলুম-নির্যাতনের মুখেও ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা যেন হতোদ্যম না হন। বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে ময়দানে থেকে সত্যের পক্ষে আপোষহীন ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের রাজনীতি প্রতিশোধ নয়, বরং সমাজে ন্যায়ভিত্তিক একটি গঠনমূলক পরিবর্তন আনা। এই কাজ করতে গিয়েই আমাদের অনেক ভাই হাসিমুখে শাহাদাত বরণ করেছেন।”
দ্বীনের প্রতিষ্ঠাই মূল লক্ষ্য
জামায়াত আমির আরও বলেন, “আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত দ্বীনের প্রতিষ্ঠা। ইসলাম শুধু ব্যক্তিগত আচরণ নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এই জীবনব্যবস্থাকে সমাজে কার্যকর করতে আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।”
শিক্ষাশিবিরে নেতৃত্বের উপস্থিতি
শিক্ষাশিবিরে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন এবং মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
শিবিরের শুরুতে দারসুল কুরআন পেশ করেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. মাওলানা আব্দুস সামাদ।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি নাজিম উদ্দীন মোল্লা, কর্মপরিষদ সদস্য জামাল উদ্দিন, মু. আতাউর রহমান সরকার, মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, শাহ আলম তুহিন এবং ইঞ্জিনিয়ার নোমান আহমেদি প্রমুখ।
অনুষ্ঠানজুড়ে বক্তারা দেশের বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। বক্তারা বলেন, সমাজের নৈতিক অবক্ষয় রোধ ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্যই জামায়াতের সংগ্রাম।
শিক্ষাশিবির আলোচনা ও নির্দেশনার মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব পর্যায়ে আদর্শিক সচেতনতা এবং সংগঠন পরিচালনার রূপরেখা উপস্থাপন করা হয়।