ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের ছায়া কাটিয়ে পাকিস্তান সফরে যাচ্ছে বাংলাদেশ, টি-টোয়েন্টি সিরিজে পরিবর্তন
সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাময়িক সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ায় বাংলাদেশ-পাকিস্তান ক্রিকেট সিরিজের ভবিষ্যৎ পড়ে গিয়েছিল অনিশ্চয়তায়। তবে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় আবার আলোচনায় এসেছে এই সিরিজ। অবশেষে নতুন করে আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ড সমঝোতায় পৌঁছেছে এবং সিরিজটি আয়োজনের জন্য একমত হয়েছে। তবে সিরিজ আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কিছু নির্দিষ্ট শর্ত মেনে নিতে হয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে (পিসিবি)।
প্রথমে দুই দেশের মধ্যে পাঁচ ম্যাচের একটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ আয়োজনের পরিকল্পনা থাকলেও বর্তমানে তা সংক্ষিপ্ত করে তিন ম্যাচের করা হয়েছে। পিসিবির ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো পাকিস্তানের স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, এই সিরিজটি হবে পুরোপুরি লাহোরে অনুষ্ঠিত। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৭ মে মাঠে গড়াবে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। লাহোরেই অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের বাকি দুই ম্যাচ। তবে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দিষ্ট সময়সূচি ঘোষণা করা হয়নি।
এদিকে, পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) ফাইনাল ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে ২৫ মে, একই ভেন্যুতে। ফলে পিএসএল ফাইনালের একদিন পরই শুরু হতে পারে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজ। এর মানে দুই দলের মধ্যকার প্রথম ম্যাচটি হতে পারে ২৭ মে, তবে এর আগে আনুষ্ঠানিক সময়সূচির অপেক্ষা করতে হবে।
পাকিস্তানের পত্রপত্রিকাগুলো জানিয়েছে, লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামেই এই সিরিজের সবকটি ম্যাচ আয়োজনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। নিরাপত্তা, যাতায়াত এবং অন্যান্য পরিকাঠামোগত সুবিধার কথা মাথায় রেখেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিসিবি। আর বিসিবিও এই সিদ্ধান্তে একমত হয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহতে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বসেছিল দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পিসিবির বর্তমান চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি, বিসিবির সভাপতি ফারুক আহমেদ এবং ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীন ফাহিম। বৈঠকটি হয়েছিল বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি ম্যাচ চলাকালীন সময়ে। মূলত সিরিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে এই বৈঠকে গভীর আলোচনা হয় এবং সিরিজের নতুন কাঠামো নির্ধারণ করা হয়।
এখনও পর্যন্ত দুই বোর্ডের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, দুই দেশের বোর্ডই এই সিরিজ আয়োজন নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে এবং খুব শিগগিরই চূড়ান্ত সূচি ঘোষণা করা হবে।
প্রসঙ্গত, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে এই সিরিজ আয়োজনে বেশ অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় কিছু সংঘর্ষের ঘটনায় আঞ্চলিক রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, যার প্রভাব পড়তে শুরু করে ক্রীড়াঙ্গনেও। বিশেষ করে পাকিস্তানের মাটিতে বিদেশি দলের সফর বরাবরই সংবেদনশীল একটি ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। এমন এক সময়েই বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফরের বিষয়টি সামনে আসে, যার ফলে বিসিবির পক্ষ থেকে একাধিক শর্ত দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে প্রধানত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ম্যাচ সংখ্যা হ্রাস, সফরের সময়কাল কমিয়ে আনা এবং একটিমাত্র ভেন্যুতে খেলার আয়োজন – এই ধরনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পেশ করা হয়। এসব শর্ত মেনে নিয়েই পাকিস্তান সিরিজ আয়োজনের পথে এগিয়েছে।
বাংলাদেশ দলের জন্য এই সিরিজটি হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতির সুযোগ। সামনে রয়েছে বিশ্বকাপের মতো বড় আসর, তাই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও ম্যাচ খেলতে পারা দলের জন্য লাভজনক হবে। নতুন খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স পরখ করার পাশাপাশি অভিজ্ঞদের ফর্ম যাচাইয়ের একটি সুযোগ হয়ে উঠবে এই সিরিজ। পাশাপাশি, পাকিস্তানের জন্য এটি হবে একটি বড় পরীক্ষা। ঘরের মাঠে বিদেশি দলকে আতিথ্য দেওয়ার সুযোগে নিজেদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থার জায়গাটি ফের তুলে ধরতে চায় পিসিবি।
পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরানোর লড়াই চলছে বহুদিন ধরেই। নিরাপত্তার কারণে দীর্ঘ সময় দেশটিতে আন্তর্জাতিক দলগুলোর সফর বন্ধ ছিল। যদিও গত কয়েক বছর ধরে ধীরে ধীরে সেই অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা করছে পিসিবি। দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ের মতো দলগুলো পাকিস্তান সফর করেছে। এবার বাংলাদেশ দলও সফরে যাচ্ছে, যা পাকিস্তানের ক্রিকেটের জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করছে।
তবে এখনো সিরিজের অনেক কিছুই নির্ভর করছে চূড়ান্ত সূচির উপর। ম্যাচগুলো কোন তারিখে হবে, বাংলাদেশ দল কবে পাকিস্তানে পৌঁছাবে, প্রস্তুতি ম্যাচ রাখা হবে কি না – এসব বিষয় এখনো পরিষ্কার নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, পিএসএল ফাইনালের পর একদিন বিরতি দিয়েই সিরিজ শুরু হবে এবং টানা কয়েকদিনের ব্যবধানে তিনটি ম্যাচ খেলে শেষ করে দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ সব সময়ই দর্শকদের জন্য উত্তেজনার উৎস হয়ে থাকে। দুই দলের মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে আলাদা আগ্রহ তৈরি করে। পাকিস্তানের ঘরের মাঠে খেলতে গিয়ে অতীতে বাংলাদেশ দলকে অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুই দলের মধ্যে ব্যবধান কমছে এবং বাংলাদেশ দল এখন অনেক পরিণত।
সব মিলিয়ে পাকিস্তান সফরটি বাংলাদেশের জন্য যেমন বড় এক চ্যালেঞ্জ, তেমনি পাকিস্তানের জন্যও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনার একটি সুযোগ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এবং নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী সিরিজটি মাঠে গড়ালে তা হবে দুই দেশের ক্রিকেটের জন্যই ইতিবাচক এক দিকচিহ্ন।