দক্ষিণ এশিয়ায় আবারও ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। জম্মু ও কাশ্মীরে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ায় নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ খালিদ জামালি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন—ভারত যদি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হামলা চালায় বা পানি সরবরাহে বাধা দেয়, তবে ইসলামাবাদ পূর্ণ সামরিক শক্তি প্রয়োগ করবে। এতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হয়নি।
রাষ্ট্রদূত জামালি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আরটি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার হাতে এমন বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে, যা প্রমাণ করে ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে। ফাঁস হওয়া কিছু ডকুমেন্ট থেকেও ভারতের উদ্দেশ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে ইসলামাবাদ। এসব তথ্যে পাকিস্তানের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় সামরিক হামলার পরিকল্পনার উল্লেখ রয়েছে।
তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি ভারত খুব শিগগির পাকিস্তানে হামলা চালাতে পারে। এবং যদি তা ঘটে, পাকিস্তান প্রতিরোধে প্রচলিত ও পারমাণবিক অস্ত্রসহ সম্পূর্ণ শক্তি প্রয়োগে দ্বিধা করবে না।”
এদিকে, ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে একটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। এই ঘটনায় ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। ভারতের অভিযোগ—পাকিস্তান সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিচ্ছে। যদিও ইসলামাবাদ এই অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে।
এই উত্তেজনার মধ্যেই ভারত ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত ঘোষণা করে, যার মধ্যস্থতা করেছিল বিশ্বব্যাংক। পাকিস্তান এই পদক্ষেপকে সরাসরি “পানিযুদ্ধ” আখ্যা দিয়ে এর কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে।
রাষ্ট্রদূত জামালি বলেন, “ভাটিতে পানি সরবরাহ বন্ধ করা, বাধা দেওয়া কিংবা প্রবাহ পরিবর্তনের যেকোনো পদক্ষেপকে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে বিবেচনা করব। এবং এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তান চুপ থাকবে না—সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে জবাব দেবে।”
এর একদিন আগে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জিও নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, যদি ভারত সিন্ধু নদের ওপর কোনো অবকাঠামো নির্মাণের চেষ্টা করে, যেমন বাঁধ নির্মাণ, তাহলে সেটিকে টার্গেট করে ধ্বংস করে দেওয়া হবে। তার বক্তব্যে স্পষ্ট যে, পাকিস্তান ভারতের পানি নিয়ে নেওয়া যেকোনো আগ্রাসী পদক্ষেপের সরাসরি সামরিক প্রতিক্রিয়া দেবে।
দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা শুধু সীমান্ত বা সামরিক পরিসরে সীমাবদ্ধ নয়; এটি এখন কূটনৈতিক, পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিক পরিসরেও প্রভাব ফেলছে। পানি একটি মৌলিক অধিকার, এবং ভারতের মতো উজান রাষ্ট্র যদি পানির প্রবাহ আটকে দেয়, তবে ভাটির রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হওয়ায় সরাসরি যুদ্ধের পথে না গিয়ে কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের উচিত অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করা যাতে দক্ষিণ এশিয়ায় বড় ধরনের সংঘাত না ঘটে।
ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক নতুন করে এক সংকটময় মোড়ে উপনীত হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের হামলা, পানি চুক্তি স্থগিত এবং সামরিক হুমকি—সব মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল ও অস্থির হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় দুই দেশের নেতৃত্বের উচিত হুমকি-ধমকির বদলে সংলাপ ও কূটনীতির মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমন করা। যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়—বরং তা মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।