রাজধানীর চীনমৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বিগত সরকার বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেছে। তবে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় অনেক ঘাটতি ও ত্রুটি রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এসডিজির অন্যতম লক্ষ্য হলো কাউকে পেছনে ফেলে না রেখে সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা, বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় নিয়ে আসা। এজন্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো যথাযথভাবে গুরুত্ব পায়নি।
নারী-শিশু নির্যাতন ও আইনি সুরক্ষা
সেমিনারের পৃথক দুটি সেশনে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং শিশুশ্রমের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উঠে আসে। বক্তারা এসব ইস্যুতে আইনি সুরক্ষা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, বর্তমান সমাজে এমন কিছু গোষ্ঠী রয়েছে যারা নিজেদের নৈতিক অভিভাবক মনে করেন। যদিও তারা সংখ্যায় কম, তবে তাদের কণ্ঠস্বর বেশ উচ্চ। এই ধরনের চিন্তাধারার মোকাবিলায় উদারনৈতিক সমাজের পক্ষে থাকা মানুষদের সোচ্চার হতে হবে।
বৈষম্য ও ন্যায়বিচারের প্রশ্ন
বৈষম্যের প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, “আমরা যখন বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলি, তখন কি সব ধরনের বৈষম্যের কথা বলি? নারী-পুরুষের বৈষম্য নিয়ে কথা বললেও লিঙ্গবৈচিত্র্যের প্রসঙ্গ তুলতে দ্বিধাবোধ করি। জাতীয়তার প্রশ্নে কথা বললেও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকার ও স্বীকৃতির প্রসঙ্গ যথাযথভাবে উত্থাপন করি না। আমাদের উচিত সকল বৈষম্যকে স্বীকার করে এর সমাধানে এগিয়ে আসা।”
তিনি আরও বলেন, “নারীর আইনি সুরক্ষা, উত্তরাধিকারের অধিকার—এসব বিষয়ে কি আমরা সমানভাবে উচ্চারণ করতে পারি? আগে এগুলো আলোচনার কেন্দ্রে ছিল না, কিন্তু এখন এসেছে। অথচ কিছু মানুষ নিজেদের নৈতিক অভিভাবক ভেবে সমাজের ওপর খবরদারি করতে চাইছেন।”
উন্নয়নের ধরন পরিবর্তনের আহ্বান
ড. দেবপ্রিয় মনে করেন, শুধু ঘরে বসে থেকে পরিবর্তনের আশা করা বোকামি। তিনি বলেন, “আমি ঘরে নিরাপদে থাকব, অন্যরা আমার জন্য পরিবর্তন আনবে—এমন ভাবনা অবাস্তব। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অপেক্ষায় বসে না থেকে প্রতিটি নাগরিককে তার অধিকারের জন্য সরব হতে হবে।”
ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান বলেন, “আমরা পিছিয়ে আছি—এমনটা না ভেবে, আমাদের কোন অধিকার আদায় হয়নি সে কারণে পিছিয়ে থাকার অবস্থা তৈরি হচ্ছে, তা চিহ্নিত করা জরুরি।”
সরকারের প্রতিক্রিয়া ও পরিকল্পনা
প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদ বলেন, আলোচনায় উঠে আসা চ্যালেঞ্জ ও ঘাটতিগুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকার পরিকল্পনা সাজাবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেটো রেঙলি এবং ইউএনডিপির বাংলাদেশ কার্যালয়ের আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফেন লিলার।
সংক্ষেপে: নাগরিক প্ল্যাটফর্ম মনে করে, বিগত সরকার উন্নয়নের তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। নারী ও শিশুর অধিকার, বৈষম্য ও ন্যায়বিচারের বিষয়গুলো উপেক্ষিত থাকায় সেগুলোর প্রতিও জোর দেওয়া জরুরি। সরকার ভবিষ্যতে এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা সাজানোর আশ্বাস দিয়েছে।