রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন নিয়ে আলোচনা ঘিরে। জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সম্প্রতি জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনায় বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে। তার মতে, জনগণের সমর্থন থাকলে এই সরকার সফলভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে।
ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাতে পারলেই অন্তর্বর্তী সরকার সফল হবে। ড. ইউনূসের জনপ্রিয়তা এবং আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা এই সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে।”
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “ড. ইউনূসকে যারা অযথা বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন, তাদের এখনই থামা উচিত। দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি জনগণের আস্থা ফেরাতে হলে এই ধরনের বিভাজনমূলক মনোভাব পরিহার করতে হবে।”
তিনি অভিযোগ করেন, কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী ও ব্যক্তিত্ব ড. ইউনূসকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য বিভিন্নভাবে প্রচার চালাচ্ছেন। এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে উপদেষ্টা কাউন্সিলেরও কিছু সদস্য জড়িত বলে তিনি দাবি করেন।
“ড. ইউনূস এখনো নিজে মুখ খুলে কিছু বলেননি। বরং তার পক্ষে প্রেস সেক্রেটারি, উপদেষ্টা, সহকারীরা কথা বলেন, আবার কিছুক্ষণ পর তা মুছে ফেলেন। এতে সাধারণ মানুষের মনে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে,” বলেন ডা. হোসেন।
আলোচনা সভায় ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, “অনেক উপদেষ্টা এমন আচরণ করছেন যেন তারা দেশের মালিক। জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে নিজেদের ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এটা জনগণের জন্য নয়, বরং নিজেদের সুবিধা আদায়ের জন্য চলছে বলে মনে হয়।”
তিনি আরও বলেন, “উপদেষ্টারা যেন দেশের প্রশাসনকে নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করছেন। কে দেশ ছাড়বে, কে দেশে ফিরবে—এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তারা। অথচ এসবের কোনো গণতান্ত্রিক ভিত্তি নেই। পূর্বের স্বৈরাচার সরকারের মতো আচরণই প্রতিফলিত হচ্ছে।”
ডা. হোসেন বলেন, “ড. ইউনূস একজন স্বীকৃত আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। তাকে ঘিরে এত ষড়যন্ত্র কেন? বিএনপি মনে করে তিনি ৯৯.৯ শতাংশ গ্রহণযোগ্যতা রাখেন, আর বাকিরা সম্মিলিতভাবে ০.০১ শতাংশও অর্জন করতে পারেননি।”
এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চান যে, ড. ইউনূসের গ্রহণযোগ্যতাকে খাটো করে দেখার চেষ্টা আসলে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করার শামিল।
আলোচনায় ডা. হোসেন ‘এনসিপি’ (ন্যাশনাল কনসেনসাস পার্টি) নামক রাজনৈতিক দলটির প্রতিও কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “আপনারা বিচারব্যবস্থায় বিশ্বাস করেন না। যখন রায় আপনাদের পক্ষে যায় তখন সেটিকে স্বাগত জানান, বিপক্ষে গেলে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দেন। এই মনোভাব গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।”
এছাড়া, তিনি সেনাবাহিনীকে নিয়ে মন্তব্য করেন—“বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব। জুলাই-আগস্ট মাসে তারা যে দায়িত্বশীলতা দেখিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টায় আপনারা নিজেরাই বিতর্কিত হয়ে যাচ্ছেন।”
ডা. হোসেন বলেন, “রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শত্রু মনে করার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। রাজনীতিতে মতবিরোধ থাকবে, কিন্তু তা যেন সহিংসতায় রূপ না নেয়। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সুগম করা।”
তিনি আন্দোলনের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে বলেন, “ছাত্র-জনতা সবসময় আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকে। তারাই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলে। কিন্তু আজকে আন্দোলনের জায়গাটি সংকুচিত হয়ে গেছে, যার প্রধান কারণ উপদেষ্টা পরিষদের স্বেচ্ছাচারিতা।”
বিএনপির এই নেতা বলেন, “দেশের মানুষ আজ একটি নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ড. ইউনূস যথার্থ ব্যক্তি হতে পারেন যদি চারপাশ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হয়।”
তবে তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, “যারা তাকে ঘিরে বির্তক তৈরি করছেন, তাদের উদ্দেশ্য একটাই—গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করা