ফ্যাসিস্ট ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং দলটির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে দলগত বিচারের বিধান সংযুক্তির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত শুরু হয়েছে। পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার বিকাল ৩টায় ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য’ ব্যানারে এ কর্মসূচি শুরু হয়। গণজমায়েতে বিভিন্ন ছাত্র ও নাগরিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগে চলমান অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়।
গণজমায়েতে অংশগ্রহণকারীরা মুখর ছিলেন নানা প্রতিবাদী স্লোগানে। তারা বলেন, ‘দিল্লি না, ঢাকা? ঢাকা, ঢাকা’, ‘ব্যান ব্যান, আওয়ামী লীগ’, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরো দেবো রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’ ইত্যাদি স্লোগান তুলে ফ্যাসিস্ট দুঃশাসনের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান জানান দেন।
এদিন দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেন আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি লেখেন, “ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্র-জনতা দুই দিন ধরে রাজপথে রয়েছে। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এই অবস্থান চলমান। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে জনগণ স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে সক্ষম হলেও এখনো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে ব্যর্থ হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ঢাকাসহ সারা দেশের ছাত্র ও জনতাকে আহ্বান জানানো হচ্ছে—জুলাইয়ের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে হবে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থানপন্থী সকল মত ও দলের আন্দোলন চলবে।”
গণজমায়েতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র সদস্যসচিব আল আমিন সরকার বলেন, “গত ১৭ বছরে আওয়ামী লীগের এমন কোনো অন্যায় নেই, যা তারা করেনি। ৫ আগস্টের পরে তারা সারাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের সন্ত্রাসী রূপ স্পষ্ট করেছে। এ দল দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি। এখনই সময় তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করার।”
শাহবাগে অনুষ্ঠিত এই গণজমায়েত একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়—বাংলাদেশের জনগণ আর ফ্যাসিবাদ, দুঃশাসন ও সন্ত্রাসের রাজনীতি মেনে নিতে রাজি নয়। তারা দেশের গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মুক্তির স্বপ্ন নিয়ে রাজপথে নেমেছে। এই জনজোয়ার প্রমাণ করে, জনগণের সম্মিলিত শক্তির সামনে কোনো ফ্যাসিস্ট শক্তি স্থায়ী হতে পারে না।
এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় জুলাইয়ের চেতনা যেন নতুন প্রজন্মের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি করে, এটাই সবার প্রত্যাশা।