প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণে জাতীয় সংসদের স্পিকারের ভূমিকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। রিট আবেদনে বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রধান বিচারপতিকে প্রেসিডেন্টের শপথ পড়ানোর নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ওমর ফারুক লেখক ও গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়জীর পক্ষে সোমবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট আবেদনটি করেন। তিনি জানান, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চে চলতি সপ্তাহেই রিট আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।
রিট আবেদনে আইন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, মন্ত্রিপরিষদসচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে বিবাদী করা হয়েছে। এতে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টকে শপথ পাঠ করানোর দায়িত্ব স্পিকারের ওপর দেওয়ার বিধানকে ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের পরিপন্থী ঘোষণা করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং এই বিধানকে স্বেচ্ছাচারী, অসাংবিধানিক ও সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী হিসেবে কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে রুল জারির আবেদন জানানো হয়েছে।
রিটের যুক্তি
রিটে উল্লেখ করা হয়েছে, রাষ্ট্রের মালিক হিসাবে নাগরিকদের অধিকার সংরক্ষণে রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাষ্ট্রপ্রধানের শপথ গ্রহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা তাঁর অধীনস্থ বা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির (স্পিকার) কাছ থেকে হওয়া উচিত নয়। কারণ স্পিকারের কার্যাবলি রাষ্ট্রপতি নিজেই তত্ত্বাবধান করেন।
এ ছাড়া প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে সম্পূর্ণ নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ পদ। তিনি সংবিধানের অভিভাবকও বটে। তাই প্রেসিডেন্টকে শপথ পাঠানোর জন্য প্রধান বিচারপতির পদটিই সবচেয়ে যোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিটে।
রিট আবেদনে আরও বলা হয়েছে, সংবিধানের সর্বোচ্চ মর্যাদা থাকা সত্ত্বেও চতুর্থ ও পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের বিধানে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ও মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে তাঁর ওপর পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা করা হয়েছে।
সংবিধান সংশোধনের পটভূমি
সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর আগে প্রেসিডেন্টকে শপথ পাঠ করাতেন প্রধান বিচারপতি এবং প্রধান বিচারপতিকে শপথ পাঠ করাতেন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এনে জাতীয় সংসদের স্পিকারকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে এই বিধান বাতিল করা হয়েছিল। তবে ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টকে শপথ পাঠ করানোর দায়িত্ব আবারও স্পিকারের হাতে ন্যস্ত করা হয়। যেহেতু সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু অংশ ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে, তাই প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ সংক্রান্ত বর্তমান বিধানও বাতিল করা উচিত বলে মত দেওয়া হয়েছে রিট আবেদনে।