Walton NEXG N10 Ultra একটি বাজেট-ফ্রেন্ডলি ৪জি স্মার্টফোন, যা ১২ জিবি RAM, ৫০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা এবং ৫০০০mAh ব্যাটারির সাথে আসে। বাংলাদেশে Walton NEXG N10 Ultra এর দাম ও স্পেসিফিকেশন জানুন।
বাংলাদেশের মোবাইল ফোন মার্কেটে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন স্মার্টফোন আসছে, যা বিভিন্ন গ্রাহকের প্রয়োজন মেটাতে তৈরি হচ্ছে। বাজেট ক্যাটাগরিতে ভালো স্পেসিফিকেশন এবং দাম-মানের ভারসাম্য বজায় রেখে Walton তাদের NEXG সিরিজের মধ্যে নতুন মডেল Walton NEXG N10 Ultra বাজারে এনেছে। ১৭,২০০ টাকার নিচে পাওয়া এই স্মার্টফোনটি বিশেষ করে ৪জি নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীদের জন্য আকর্ষণীয় একটি অপশন।
এই আর্টিকেলে আমরা Walton NEXG N10 Ultra এর সমস্ত দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো — স্পেসিফিকেশন থেকে শুরু করে পারফরম্যান্স, ক্যামেরা, ব্যাটারি এবং বাজারে এর গুরুত্ব ও প্রতিযোগিতা পর্যন্ত।
Walton NEXG N10 Ultra বাজারে এসেছে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে এবং বর্তমানে এর দাম বাংলাদেশে প্রায় ১৭,২০৮ টাকা। ফোনটি একক ভ্যারিয়েন্টে পাওয়া যায় যেখানে ১২ জিবি RAM এবং ১২৮ জিবি স্টোরেজ রয়েছে।
বাংলাদেশে এটি অফিশিয়ালি পাওয়া যাচ্ছে এবং দেশের নিজস্ব ব্র্যান্ড Walton এর জন্য এটি একটি বড় প্লাস পয়েন্ট, কারণ Walton দেশের বাজারের চাহিদা ভালো বুঝে ফোন তৈরি করে থাকে।
Walton NEXG N10 Ultra এর ডিজাইন ও বিল্ডিং একটি মডার্ন লুক ও মান বজায় রেখেছে। ফোনের মাত্রা ১৬৫.৭ x ৭৬.৫ x ৯.১ মিলিমিটার, ওজন প্রায় ১৯৫ গ্রাম, যা হাতের জন্য ভালো গ্রিপ এবং হালকা অনুভূতি দেয়।
ফোনটি তিনটি রঙে পাওয়া যায় — Blurple Blue, Pale Gold, এবং Chrome Black — যা তরুণদের পছন্দমতো বিভিন্ন রং অপশন দেয়। ফোনের পিছনের প্যানেল কিছুটা চকচকে এবং প্রিমিয়াম ফিল দেয়।
সাইড-মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর থাকায় ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক খোলা দ্রুত এবং নিরাপদ।
Walton NEXG N10 Ultra এর প্রধান আকর্ষণ এর ৬.৭ ইঞ্চির বড় IPS LCD প্যানেল। যদিও এটি HD+ রেজোলিউশনের (৭২০ x ১৬০০ পিক্সেল), এর ৯০Hz রিফ্রেশ রেটের কারণে স্ক্রলিং এবং ইউআই এনিমেশন অনেকটাই স্মুথ মনে হয়। স্ক্রিনের ব্রাইটনেস প্রায় ৭০০ nits, যা আউটডোর ভিউয়ের জন্য যথেষ্ট ভালো।
ডিসপ্লেতে ১৮০Hz টাচ স্যাম্পলিং রেট থাকার কারণে গেমিং এবং স্পর্শ সংক্রান্ত কাজগুলো সজীবভাবে প্রতিক্রিয়া করে।
তবে, ডিসপ্লের রেজোলিউশন শুধুমাত্র HD+ হওয়ায় Full HD বা AMOLED প্যানেলের সাথে তুলনায় ভিজুয়াল কনটেন্টের ক্লারিটি কিছুটা কম লাগতে পারে।
এই ফোনটির ভিতরে MediaTek Helio G85 SoC (১২nm) রয়েছে, যা বাজেট ও মধ্য-দামের সেকশনে ভাল পারফরম্যান্স দেয়। এটি একটি অক্টা-কোর প্রসেসর (২.০ GHz) যা দৈনন্দিন কাজের জন্য যেমন ওয়েব ব্রাউজিং, ভিডিও দেখা, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে পারফেক্ট।
১২ জিবি RAM থাকায় মাল্টিটাস্কিং বেশ ফ্লুয়িড, অনেক অ্যাপ একসাথে চালানো যায় এবং ১২৮ জিবি স্টোরেজের মাধ্যমে প্রচুর ফাইল, ছবি, ভিডিও রাখা সম্ভব। এছাড়াও মাইক্রোএসডি কার্ড স্লট থাকায় স্টোরেজ আরও ২৫৬ জিবি পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।
গ্রাফিক্সের জন্য Mali-G52 MC2 GPU থাকায় হালকা থেকে মাঝারি মানের গেমস ভালোভাবে চালানো যায়। তবে হাই-এন্ড গেমস যেমন Call of Duty বা PUBG গ্রাফিক্সের ক্ষেত্রে কিছুটা ল্যাগ হতে পারে।
সাধারণ ইউজারদের দৈনন্দিন ব্যবহারে Helio G85 যথেষ্ট হলেও, মোবাইল গেমার বা হাই-এন্ড ইউজারেরা এটার পারফরম্যান্স নিয়ে একটু চিন্তা করতে পারেন।
Walton NEXG N10 Ultra এর ক্যামেরা সেটআপ বেশ আকর্ষণীয়, বিশেষ করে এই প্রাইস রেঞ্জে।
৫০ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি ক্যামেরা (f/1.8) – বড় সেন্সর, যা আলো কম থাকা সত্ত্বেও ভালো ছবি তোলার চেষ্টা করে।
২ মেগাপিক্সেল ম্যাক্রো ও ডেপথ সেন্সর – ক্লোজআপ ছবি ও পোর্ট্রেট মোডে বোকেহ ইফেক্টের জন্য।
রিয়েল ক্যামেরা ফিচারগুলোতে রয়েছে: প্রো মোড, প্যানোরামা, টাইম ল্যাপস, স্লো মোশন, নাইট মোড, বিউটি মোড ও ফিল্টার। ভিডিও রেকর্ডিং ১০৮০p@৩০fps এবং ৬০fps এ সম্ভব।
৫০ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা (f/2.5) — যা ডিসপ্লে পাঞ্চহোলের মধ্যে রয়েছে। এই ক্যামেরাও ভালো রেজোলিউশনের ছবি দেয় এবং ভিডিও রেকর্ডিং ১০৮০p@৩০fps এ করতে পারে।
সাধারণ দৈনন্দিন ছবি তোলার জন্য এই ক্যামেরা যথেষ্ট ভালো হলেও প্রফেশনাল বা অত্যাধুনিক ক্যামেরার তুলনায় কিছুটা সীমাবদ্ধতা থাকবে।
Walton NEXG N10 Ultra তে আছে শক্তিশালী ৫০০০ mAh Li-Po ব্যাটারি, যা সাধারণ ব্যবহারে প্রায় একদিন বা তারও বেশি ব্যাকআপ দিতে পারে।
ব্যাটারি দক্ষতা বেশ ভালো, বিশেষ করে ৭২০p রেজোলিউশনের ডিসপ্লে ও Helio G85 এর কম পাওয়ার খরচের কারণে।
চার্জিং পোর্ট হিসেবে রয়েছে USB Type-C 2.0। যদিও ফাস্ট চার্জিং স্পিডের বিস্তারিত পাওয়া যায়নি, তবে ৫০০০ mAh ব্যাটারি যুক্ত ফোন হিসেবে এর ব্যাটারি লাইফ প্রশংসনীয়।
Walton NEXG N10 Ultra সাপোর্ট করে:
GSM / HSPA / LTE (4G), কিন্তু 5G নেটওয়ার্ক সাপোর্ট নেই। তাই 5G ব্যবহারকারীরা এই ফোন বিবেচনা করবেন না।
Wi-Fi 802.11 b/g/n, ডুয়াল ব্যান্ড সাপোর্ট।
Bluetooth v5.0
GPS ও A-GPS ফিচার।
3.5mm হেডফোন জ্যাক এবং স্টেরিও লাউডস্পিকার।
FM রেডিও সাপোর্ট।
NFC না থাকায় কিছু নির্দিষ্ট ক্যাশলেস পেমেন্ট অ্যাপস সীমিত থাকতে পারে।
ইনফ্রারেড পোর্ট নেই।
ডুয়াল ন্যানো সিম কার্ড স্লট থাকায় দুইটি সিম একসাথে ব্যবহার করা যাবে।
ফোনটি Android 14 R OS এর ওপর চলে, যা এই সময়ে আপ-টু-ডেট এবং ভালো ইউজার এক্সপেরিয়েন্স দেয়। অ্যান্ড্রয়েড ১৪ এর নতুন ফিচার যেমন উন্নত প্রাইভেসি কন্ট্রোল, হালকা থিম এবং পারফরম্যান্স অপটিমাইজেশন এখানে পাওয়া যাবে।
Walton এর নিজস্ব কিছু কাস্টমাইজেশন ও প্রিলোডেড অ্যাপ থাকতে পারে, যা ফোনের ব্যবহারকে সহজ করে তোলে।
১২ জিবি RAM এবং ১২৮ জিবি স্টোরেজ এই প্রাইস রেঞ্জে দুর্দান্ত।
বড় ৬.৭ ইঞ্চি ৯০Hz IPS ডিসপ্লে ভালো ইউজার এক্সপেরিয়েন্স দেয়।
৫০ মেগাপিক্সেল প্রধান ক্যামেরা ও ৫০ মেগাপিক্সেল সেলফি ক্যামেরা।
৫০০০ mAh ব্যাটারি শক্তিশালী ব্যাকআপ।
Android 14 R OS আপ-টু-ডেট সফটওয়্যার।
স্টেরিও স্পিকার এবং হেডফোন জ্যাক সহ পোর্ট।
৫জি সাপোর্ট নেই, যা আগামী দিনে কিছু গ্রাহকের জন্য সমস্যা হতে পারে।
ডিসপ্লে HD+ রেজোলিউশন হওয়ায় ক্লিয়ারিটি কিছুটা কম।
MediaTek Helio G85 যদিও ভালো, তবে হাই-এন্ড গেমিং ও কাজের জন্য সীমাবদ্ধ।
NFC না থাকার ফলে কিছু ক্যাশলেস পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার সীমিত।
Walton NEXG N10 Ultra বাজেট ক্যাটাগরিতে বেশ শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশি বাজারে যারা ৪জি নেটওয়ার্কে ভালো ব্যাটারি, পর্যাপ্ত RAM, এবং শক্তিশালী ক্যামেরা সহ স্মার্টফোন চান, তাদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প।
এই দামে প্রতিযোগীদের মধ্যে Samsung Galaxy A03s, Realme C30, Infinix Smart 7 ইত্যাদি আছে, তবে Walton এর ১২ জিবি RAM এবং ৫০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা এই মডেলটিকে এগিয়ে রেখেছে।
১. বাজেট-ফ্রেন্ডলি স্পেসিফিকেশন: ১৭,২০০ টাকার নিচে ১২ জিবি RAM পাওয়া বিরল, যা মাল্টিটাস্কিংয়ে সুবিধা দেয়।
২. বড় ব্যাটারি: দীর্ঘ সময় ফোন চার্জ ছাড়াই ব্যবহার করা যাবে।
৩. দৃঢ় ক্যামেরা সিস্টেম: ৫০ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি ও সেলফি ক্যামেরা ভালো ছবি তুলতে সক্ষম।
৪. আপডেটেড অ্যান্ড্রয়েড: Android 14 সুবিধা পাওয়া যাবে।
৫. দেশীয় ব্র্যান্ড ও সাপোর্ট: Walton বাংলাদেশি ব্র্যান্ড হওয়ায় দেশে সার্ভিস সুবিধা ভালো।
যারা বাজেটের মধ্যে ভালো স্পেসিফিকেশন চায়।
হালকা থেকে মাঝারি গেমার।
দীর্ঘ ব্যাটারি লাইফ চাই।
৫জি নেটওয়ার্কের প্রয়োজন নেই এমন ব্যবহারকারী।
যারা Walton ব্র্যান্ডের বিশ্বস্ততা চান।
প্রশ্ন: Walton NEXG N10 Ultra কখন মুক্তি পেয়েছে?
উত্তর: ২০২৪ সালের ডিসেম্বর।
প্রশ্ন: Walton NEXG N10 Ultra এর দাম কত?
উত্তর: বাংলাদেশে প্রায় ১৭,২০৮ টাকা।
প্রশ্ন: এটি ৫জি সাপোর্ট করে?
উত্তর: না, শুধুমাত্র ৪জি নেটওয়ার্ক সাপোর্ট করে।
প্রশ্ন: এর RAM এবং স্টোরেজ কত?
উত্তর: ১২ জিবি RAM এবং ১২৮ জিবি স্টোরেজ।
প্রশ্ন: ক্যামেরার গুণগত মান কেমন?
উত্তর: ৫০ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি এবং ৫০ মেগাপিক্সেল সেলফি ক্যামেরা আছে, যা বাজেট ফোনের জন্য ভালো।
Walton NEXG N10 Ultra বাজেট ক্যাটাগরিতে একটি শক্তিশালী পছন্দ। ১২ জিবি RAM, ৫০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা, বড় ব্যাটারি এবং Android 14 এর সমন্বয়ে এটি ভালো ব্যবহারযোগ্যতা দেয়। যদিও ৫জি না থাকা ও HD+ ডিসপ্লে কিছুটা সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করে, তবুও ১৭ হাজার টাকার নিচে এটি সেরা ৪জি স্মার্টফোনগুলোর মধ্যে অন্যতম।
যারা বাজেটের মধ্যে শক্তিশালী স্মার্টফোন খুঁজছেন, Walton NEXG N10 Ultra তাদের জন্য অবশ্যই বিবেচনা যোগ্য।
Walton NEXG N10 Ultra একটি সাশ্রয়ী দামের ৪জি স্মার্টফোন যা বাংলাদেশের বাজারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এর শক্তিশালী RAM, বড় ব্যাটারি এবং আপডেটেড সফটওয়্যার ব্যবহারকারীদের দৈনন্দিন কাজ ও বিনোদনে সহায়তা করবে। যদি তোমার বাজেট কম এবং ৫জি প্রয়োজন না হয়, তাহলে Walton NEXG N10 Ultra তোমার জন্য আদর্শ।