এই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম এবং প্রায় ২০০ কোটির বেশি অনুসারী এই ধর্মের আদর্শ অনুসরণ করে। ইসলামের মূল শিক্ষা হলো—ঈমান, আমল, ইখলাস এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ)-এর প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য। ইসলামের ইতিহাস শুরু হয় সপ্তম শতাব্দীর আরব উপদ্বীপ থেকে। এটি কেবল একটি ধর্ম নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা—যা সমাজ, রাষ্ট্র ও ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিটি দিক নিয়ন্ত্রণ করে।
ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে আরব বিশ্বের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থা অত্যন্ত নাজুক ছিল। এই সময়কে ‘জাহেলিয়াত যুগ’ বলা হয়, যার অর্থ—অজ্ঞতার যুগ।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য:
বহু দেব-দেবীর পূজা
নারী অবমাননা ও কন্যা সন্তানদের জীবিত কবর দেওয়া
গোত্রীয় যুদ্ধ ও বিভাজন
মদ্যপান, জুয়া ও অনৈতিকতা
৬১০ খ্রিস্টাব্দে হেরা গুহায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর প্রথম ওহি নাজিল হয়। এরপর তিনি ধর্ম প্রচার শুরু করেন।
প্রথম পর্যায়: মক্কা যুগ (১৩ বছর):
গোপনে ও পরে প্রকাশ্যে দাওয়াত
নির্যাতন ও প্রতিকূলতা
শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন
হিজরত পরিকল্পনা
দ্বিতীয় পর্যায়: মদিনা যুগ (১০ বছর):
ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা
মসজিদে নববী নির্মাণ
হিজরী সন প্রবর্তন
যুদ্ধ: বদর, উহুদ, খন্দক
আবু বকর (রাঃ): রিদ্দাহ যুদ্ধ, কুরআন সংকলন শুরু
ওমর (রাঃ): ইসলামী সাম্রাজ্যের বিস্তার—পারস্য, সিরিয়া, মিসর জয়
ওসমান (রাঃ): কুরআন সংকলনের চূড়ান্ত রূপ
আলী (রাঃ): প্রথম গৃহযুদ্ধ—জামাল ও সিফফিন
রাজধানী: দামেস্ক
বিস্তার: স্পেন থেকে সিন্ধু পর্যন্ত
প্রশাসনিক সংস্কার ও মুদ্রা প্রবর্তন
রাজধানী: বাগদাদ
জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাহিত্য চর্চা—‘Bayt al-Hikmah’
ইউরোপীয় রেনেসাঁর ভিত্তি
১. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি:
আল-খাওয়ারিজমি: গাণিতিক বীজগণিত
ইবনে সিনা: চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক
ইবনে হাইয়্যাম: অপটিক্স
২. সাহিত্য ও শিল্প:
সুফি সাহিত্য, উর্দু-আরবি-পারসিয়ান কবিতা
ইসলামিক স্থাপত্য—তাজমহল, আল-আকসা, কুতুব মিনার
৩. দর্শন ও নীতিশিক্ষা:
ইবনে রুশদ, গাজ্জালি, ইবনে তাইমিয়া
শরিয়াহ ভিত্তিক বিচার ব্যবস্থা
১. ইউরোপ: আন্দালুস (স্পেন) — Córdoba সভ্যতা
২. আফ্রিকা: মালি, ঘানা, সোমালিয়া—ইসলামী সংস্কৃতি ও রাজনীতি
৩. এশিয়া: ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া—সুফিদের মাধ্যমে
৪. উপমহাদেশে ইসলাম:
মুহাম্মদ বিন কাসিমের আগমন (৭১১ খ্রিঃ)
দিল্লি সুলতানাত ও মুঘল সাম্রাজ্য
১৮শ–২০শ শতকে মুসলিম বিশ্ব ইউরোপীয় উপনিবেশের অধীন হয়।
ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশ রাজত্ব
অটোমান সাম্রাজ্যের পতন (১৯২৪)
মুসলিম ঐক্য হ্রাস ও বিভাজন
১. ইসলামপন্থী পুনর্জাগরণ:
মুসলিম ব্রাদারহুড, জামাত-ই-ইসলামী
ইখওয়ানুল মুসলিমিন, তাবলীগ জামাত
২. আধুনিক রাষ্ট্রে ইসলাম:
পাকিস্তান (১৯৪৭): ইসলামী রাষ্ট্র ঘোষণা
ইরান: ইসলামী বিপ্লব (১৯৭৯)
মালয়েশিয়া ও তুরস্কে ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ইসলামী আন্দোলন
৩. ইসলামফোবিয়া ও জবাব:
পশ্চিমা দেশে ইসলামফোবিয়া বৃদ্ধি
মুসলিমদের আত্মপরিচয় সংগ্রাম
দাওয়াত, মিডিয়া ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা
অনলাইন ইসলামিক শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম: ইসলামিক অ্যাপ, ভিডিও লেকচার
আল কুরআনের মোবাইল অ্যাপ
AI ও ইসলামিক স্কলারদের নতুন ভূমিকা
ভার্চুয়াল মসজিদ ও খুতবা
আরব বণিকদের আগমন (৭ম শতক)
চট্টগ্রাম ও সিলেটে ইসলামের বিস্তার (শাহ জালাল, শাহ পরান)
সুলতানি যুগের মসজিদ নির্মাণ
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে মুসলিম আলেমদের ভূমিকা
সমসাময়িক: ইসলামী রাজনৈতিক দল, শিক্ষা ব্যবস্থা, ফতোয়া ইস্যু
বর্তমান প্রজন্মের একাংশ এই চেতনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। প্রযুক্তিনির্ভর জীবন, সামাজিক মাধ্যমে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব, নাস্তিকতার প্রচার এবং পরিবারে ধর্মীয় শিক্ষার ঘাটতির কারণে তরুণরা অনেক সময় ইসলামী মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুত হচ্ছে।
প্রযুক্তি-বান্ধব ইসলামিক শিক্ষা: তরুণদের জন্য ইউটিউব, পডকাস্ট, অ্যাপ ইত্যাদির মাধ্যমে আধুনিক ইসলামী কনটেন্ট তৈরি করা।
মসজিদ কেন্দ্রিক তরুণ প্রোগ্রাম: ক্রীড়া, বিতর্ক, সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে তরুণদের ইসলামের নৈতিক শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করা।
স্কুল-কলেজ পর্যায়ে ইসলামিক স্কলারদের উপস্থিতি: তরুণরা যেন প্রশ্ন করতে পারে এবং যুক্তিভিত্তিক ইসলাম চর্চা করতে উৎসাহ পায়।
ইসলামের স্বর্ণযুগে বিজ্ঞানী ও আলেম একই মানুষ ছিলেন (যেমন: ইবনে সিনা, আল-খাওয়ারিজমি)। কুরআনও বহু আয়াতে সৃষ্টিজগত নিয়ে চিন্তাচর্চার উৎসাহ দেয়।
বর্তমানে অনেকে মনে করে ইসলাম বিজ্ঞানবিরোধী, যা একেবারে ভ্রান্ত।
আধুনিক সায়েন্সে কুরআনের ইঙ্গিত: জ্যোতির্বিদ্যা, ভ্রূণবিজ্ঞান, মহাকাশ, পানি চক্র ইত্যাদি বিষয়ে কুরআনের বক্তব্য নিয়ে গবেষণা।
ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে বিজ্ঞান চর্চা: মাদ্রাসা-ইউনিভার্সিটির মেলবন্ধন।
‘Science and Islam’ কোর্স বা ফ্যাকাল্টি চালু: বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে।
ইসলাম মানবাধিকার রক্ষার অগ্রদূত। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) দাসপ্রথা বিলুপ্ত করেন, নারীর অধিকার নিশ্চিত করেন, সংখ্যালঘুদের রক্ষা করেন।
অনেক সময় মিডিয়া ইসলামী আইনকে “মানবাধিকারের পরিপন্থী” হিসেবে উপস্থাপন করে।
এই ধর্মে মানবাধিকারের ব্যাখ্যা তুলে ধরা: বিশেষ করে নারী অধিকার, যুদ্ধনীতির মানবিক দিক, সংখ্যালঘুর সুরক্ষা ইত্যাদি।
আন্তর্জাতিক সংলাপে মুসলিম স্কলারদের অংশগ্রহণ: জাতিসংঘ, EU, ওআইসি পর্যায়ে।
স্থানীয়ভাবে মানবাধিকার বিষয়ক ইসলামিক ওয়ার্কশপ: যুব সমাজের জন্য।
মাজহাব ভিত্তিক বিভেদ
ভৌগোলিক-রাজনৈতিক মতানৈক্য
অর্থনৈতিক স্বার্থ ও নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব
মুসলিম দেশগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে কাজ করে
ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইয়েমেন ইত্যাদিতে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নেই
OIC-কে সক্রিয় ও কার্যকর করা
ইসলামী ইউনিভার্সাল মিডিয়া তৈরি করা: যা বিশ্ব মুসলিমের কণ্ঠস্বর হবে
‘Muslim Economic Block’ গঠন: হালাল ইন্ডাস্ট্রি, ইসলামিক ফাইন্যান্স
বিশ্বে ধর্মীয় সহনশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তঃধর্ম সংলাপ অপরিহার্য। এটা একমাত্র ধর্ম যা অন্য ধর্মের প্রতি সহানুভূতির কথা বলে—“তোমাদের ধর্ম তোমাদের, আমার ধর্ম আমার” (সূরা কাফিরুন)।
উগ্রবাদী গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড
পশ্চিমা মিডিয়ার পক্ষপাতদুষ্ট রিপোর্টিং
পারস্পরিক ভ্রান্ত ধারণা
সহনশীল ও মানবিক দিক তুলে ধরা
যুবদের মাধ্যমে আন্তঃধর্ম বন্ধুত্ব তৈরি
গীর্জা-মন্দির-মসজিদ সংলাপ আয়োজন
এই ধর্মের ইতিহাস এক মহৎ ও সমৃদ্ধ যাত্রার নাম। এই ধর্ম শুধু ধর্মীয় আচার নয়, বরং এক জীবনব্যবস্থা, যা প্রাচীনকালে যেমন মানবতার কল্যাণে নিবেদিত ছিল, আধুনিক যুগেও তেমনি এর চর্চা সমাজ উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। এর শিক্ষা আজও সময়োপযোগী, মানবিক এবং বৈশ্বিক শান্তির প্রতীক।