আগামী ২৫ মার্চ এএফসি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের তৃতীয় রাউন্ডে ‘সি’ গ্রুপের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারত। শিলংয়ের জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচকে ঘিরে দুই দেশের ফুটবলপ্রেমীদের মাঝে উত্তেজনা তুঙ্গে। বিশেষ করে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের খেলোয়াড় হামজা চৌধুরীর অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের দলকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। ফুটবল ইতিহাসে তৃতীয়বারের মতো ভারতকে হারানোর স্বপ্ন দেখছে জামাল ভূঁইয়া, রাকিব হোসেনরা।
ইতিহাস ও র্যাঙ্কিংয়ের বিচারে ভারত এগিয়ে
ফিফা র্যাঙ্কিং অনুযায়ী ‘সি’ গ্রুপের চার দলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে (১৮৫তম), আর ভারত রয়েছে শীর্ষে (১২৬তম)। র্যাঙ্কিংয়ের পাশাপাশি পরিসংখ্যানেও ভারত অনেক এগিয়ে। গত ২৫ বছরে বাংলাদেশ একবারও ভারতকে হারাতে পারেনি। ১৯৯৯ সালের অক্টোবরের পর থেকে দুই দল ১৪টি ম্যাচ খেলেছে, যার মধ্যে ভারত জিতেছে ৬টি এবং বাকি ৮টি ম্যাচ ড্র হয়েছে। সব মিলিয়ে দুই দলের ৩১ ম্যাচের মুখোমুখি লড়াইয়ে বাংলাদেশের জয় মাত্র দুটি।
বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ কতটা কঠিন?
ভারত শক্তিশালী দল হিসেবে মাঠে নামলেও বাংলাদেশও নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা চৌধুরীর অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের মিডফিল্ডকে শক্তিশালী করেছে। তবে ভারতের বিপক্ষে জয় পেতে হলে বাংলাদেশকে কিছু কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে।
১. মাঠ ও কন্ডিশনের চ্যালেঞ্জ:
শিলংয়ের উচ্চতাভিত্তিক আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া বাংলাদেশের জন্য কঠিন হতে পারে। যদিও সৌদি আরবে প্রস্তুতি ক্যাম্প করেছে বাংলাদেশ, তবে শিলংয়ের মাঠের সঙ্গে কতটা খাপ খাওয়ানো যাবে, সেটাই দেখার বিষয়।
২. মিডফিল্ডের লড়াই:
হামজা চৌধুরীর অন্তর্ভুক্তিতে বাংলাদেশ মিডফিল্ড শক্তিশালী হলেও ভারতও নিজেদের পরিকল্পনা সাজিয়ে নিয়েছে। ইনজুরির কারণে ব্র্যান্ডন ফার্নান্দেস না থাকলেও মিডফিল্ডে শক্তিশালী বিকল্প নিয়েছে ভারত। উদান্তা সিং ও মার্কাটন লুইস নিকসনের মতো খেলোয়াড়রা মিডফিল্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইবে।
৩. রক্ষণভাগের পরীক্ষা:
বাংলাদেশের রক্ষণভাগের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছেন ভারতীয় কিংবদন্তি ফরোয়ার্ড সুনীল ছেত্রী। বয়স ৪০ হলেও মালদ্বীপের বিপক্ষে ফেরার ম্যাচেই গোল করে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন। তারিক কাজী, তপু বর্মণদের জন্য তাকে সামলানো কঠিন পরীক্ষা হতে পারে।
৪. ফিনিশিং দুর্বলতা:
বাংলাদেশের আক্রমণভাগের অন্যতম সমস্যা ফিনিশিং। রাকিব, ফাহিম, ইব্রাহিমরা প্রতিপক্ষের রক্ষণে চাপ সৃষ্টি করলেও গোল করার দক্ষতা এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। ভারতের রক্ষণভাগে রাহুল ভেকে এবং গোলবারের নিচে বিশাল কাইথের মতো দক্ষ গোলরক্ষক থাকায় বাংলাদেশের ফরোয়ার্ডদের পারফরম্যান্সকেই পার্থক্য গড়ে দিতে হবে।
জয়ের জন্য বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত?
ভারতের বিপক্ষে জয় পাওয়া সহজ হবে না, তবে বাংলাদেশ দল নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স দিতে প্রস্তুত। হামজা চৌধুরীর ইউরোপিয়ান অভিজ্ঞতা, মিডফিল্ডের শক্তি বৃদ্ধি এবং দলে তৈরি হওয়া উদ্দীপনা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক দিক। তবে ম্যাচ জিততে হলে রক্ষণভাগকে সংঘবদ্ধ থাকতে হবে, মিডফিল্ডকে নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে এবং ফরোয়ার্ডদের গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।
বাংলাদেশ ফুটবল এখন নতুন এক যুগের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। এই ম্যাচে ভারতকে হারানো সম্ভব হলে সেটি হবে বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ২৫ মার্চ মাঠেই দেখা যাবে, বাংলাদেশ কতটা সফল হতে পারে!