যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাসাগরীয় ও বায়ুমণ্ডলীয় প্রশাসন (এনওএএ) থেকে বিপুলসংখ্যক কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে বাংলাদেশে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাসদানে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, এনওএএ-র জনবল সংকোচনের ফলে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন দুর্যোগের নির্ভুল পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে, যা বিশ্বজুড়ে বিপুল ক্ষতির কারণ হতে পারে।
সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসে লেখা ‘ইউনিয়ন অব দ্য কনসার্নড সায়েন্টিস্টস’ নামক বিজ্ঞানীদের একটি সংগঠনের চিঠিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এনওএএ দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশে এল নিনো ও লা নীনার প্রভাব পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাস প্রদান করে আসছে। কিন্তু গত ২৮ ফেব্রুয়ারি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে সংস্থাটির ৮০০ জন কর্মকর্তা ছাঁটাই করা হয়, যাদের মধ্যে জলবায়ু গবেষক ও বিজ্ঞানীরাও রয়েছেন।
বিজ্ঞানীরা ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তকে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার বিরুদ্ধে এক বড় ধাক্কা হিসেবে দেখছেন। এনওএএ-র সাবেক জলবায়ু বিজ্ঞানী টম ডি লিবার্তো বলেন, “এনওএএ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কাজ করে না, এটি বৈশ্বিক জলবায়ু সহযোগিতা, দুর্যোগ সতর্কীকরণ, মৎস্য ব্যবস্থাপনা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যখন বৈশ্বিকভাবে দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ছে, তখন এমন একটি সিদ্ধান্ত বিশ্বের জন্য মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন দেশজুড়ে ব্যাপক সরকারি কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে, যার বড় অংশ পড়েছে আবহাওয়া ও জলবায়ু সংক্রান্ত সংস্থাগুলোর ওপর। ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি অবাস্তব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন, যার ফলে এনওএএ ছাড়াও ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (NHC), স্টর্ম প্রেডিকশন সেন্টার (SPC), জলবায়ু পূর্বাভাস কেন্দ্র (CPC) এবং আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্র (WPC)-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলোর কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এনওএএ-র তথ্য সারা বিশ্বে ভাগ করে নেওয়া হয়, যা বিভিন্ন দেশের আবহাওয়াবিদ, জরুরি পরিকল্পনাবিদ ও সরকারগুলোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংস্থাটির কার্যক্রম ব্যাহত হলে বৈশ্বিক আবহাওয়া সিস্টেম পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাসের নির্ভুলতা হ্রাস পেতে পারে, যার ফলে ইউরোপ, ক্যারিবিয়ান, ব্রাজিল, আফ্রিকা, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং দক্ষিণ এশিয়ায় দুর্যোগ মোকাবিলায় জটিলতা সৃষ্টি হবে।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, এনওএএ-র সক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে কেবল আবহাওয়ার পূর্বাভাসই বাধাগ্রস্ত হবে না, বরং জলবায়ু বিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্রও সংকুচিত হয়ে পড়বে। উন্নত পূর্বাভাস মডেল তৈরির প্রচেষ্টা ব্যাহত হতে পারে, মৎস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদের যৌথ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং পরিবেশ সংরক্ষণেও চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হবে। এর ফলে দুর্যোগ মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।