বর্তমানে শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহে অভূতপূর্ব অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে, যা দেশের শিল্প উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে সোমবার প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে শিল্পে গ্যাস সরবরাহ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত শিল্প খাতে প্রতিদিন গড়ে ৮২ কোটি ৩০ লাখ ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছিল। ২০২৫ সালের একই সময়ের মধ্যে সরবরাহ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯ কোটি ৭০ লাখ ঘনফুটে। শুধু এপ্রিল মাসেই গ্যাস সরবরাহ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে প্রতিদিন সরবরাহ ছিল ৭২ কোটি ৬০ লাখ ঘনফুট, যেখানে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে তা দাঁড়িয়েছে ১০৮ কোটি ৮০ লাখ ঘনফুটে।
সরকার শিল্পে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে, গত বছরের তুলনায় এবার ছয়টি বাড়তি এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) কার্গো আমদানি করা হয়েছে। প্রতিটি ঘনমিটার এলএনজি আমদানিতে সরকারের খরচ হচ্ছে প্রায় ৬৫ টাকা, অথচ শিল্পখাতে এই গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে ৩০ টাকায় এবং শিল্পে উৎপাদিত বিদ্যুতের জন্য ৩১ টাকা ৫০ পয়সায়। এতে করে সরকারকে প্রতি ঘনমিটারে গড়ে ৩৫ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, যা সরকারের শিল্পবান্ধব মনোভাবেরই প্রতিফলন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ২৮ মে থেকে গ্যাস সরবরাহ দিনে আরও ১৫ কোটি ঘনফুট বাড়ানো হবে। এর ফলে শিল্পকারখানায় গ্যাস সংকট অনেকাংশেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। শিল্প উদ্যোক্তারা দীর্ঘদিন ধরেই গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন। সরকারের এই উদ্যোগ তাদের জন্য স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেছে, সরকারের এই সক্রিয় পদক্ষেপের ফলে শিল্পে গ্যাস সরবরাহ সংক্রান্ত বিভ্রান্তি দূর হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে শিল্পায়নের পথে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করে বিনিয়োগ ও উৎপাদনের গতি ধরে রাখা।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এ ধরনের অব্যাহত গ্যাস সরবরাহ শিল্পখাতে উৎপাদনশীলতা বাড়াবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং সামগ্রিকভাবে দেশের রপ্তানি ও আভ্যন্তরীণ বাজার উভয়েই ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। গ্যাস সংকটের ফলে বন্ধ হয়ে যাওয়া বা কম উৎপাদনে থাকা অনেক কারখানাই আবার পূর্ণ সক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবে।
এই উদ্যোগ প্রমাণ করে যে সরকার শিল্পখাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং এর উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। দীর্ঘমেয়াদে এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের শিল্পায়ন প্রক্রিয়া আরও বেগবান হবে।