“এইচএসসি ২০২৫ পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষা বোর্ডের কঠোর নির্দেশনা জারি হয়েছে। প্রশ্নপত্র নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে কী কী পরিবর্তন আসছে, এখনই জেনে নিন!”
২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি চ্যালেঞ্জপূর্ণ সময়ের মুখোমুখি হয়েছে। প্রশ্নপত্র নিরাপত্তা, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং পরীক্ষার সম্ভাব্য পেছানোর গুঞ্জন—সব মিলিয়ে জাতীয় পরীক্ষাটিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে এক উত্তেজনাকর ও সংকটময় পরিস্থিতি। এই প্রবন্ধে আমরা বিশ্লেষণ করব কী কী নির্দেশনা এসেছে শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা বাস্তব এবং সামনে কী সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে কেন্দ্র সচিবদের উদ্দেশে ৩৩ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তা ও সঠিক সেট যাচাই।
বিজি প্রেস থেকে আসা প্রশ্নপত্রের সেট সংখ্যা মিলিয়ে দেখা।
কম বা বেশি সেট থাকলে ১৯ জুনের মধ্যে ই-মেইলে জানানো।
প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করতে হবে পরীক্ষার তিন দিন আগে।
নির্দিষ্ট সেট অনুযায়ী খামে সংরক্ষণ ও পরীক্ষার দিন সকালে SMS নির্দেশনার ভিত্তিতে খোলার অনুমতি।
অব্যবহৃত প্রশ্নপত্র খোলা যাবে না এবং তা অক্ষত অবস্থায় ফেরত পাঠাতে হবে।
ট্যাগ অফিসার ও পুলিশের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।
এ নির্দেশনার মাধ্যমে বোর্ড পরীক্ষা সুষ্ঠু, নকলমুক্ত ও নিরাপদ করতে চায়। অতীতে যেভাবে প্রশ্নফাঁস ইস্যু দেশজুড়ে আলোচনায় এসেছে, সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই এবার আগেভাগে নিরাপত্তার কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতিদিন সকাল ১০টা ও দুপুর ২টা। শিক্ষার্থীদের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক ঘোষিত পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাস অনুযায়ী পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।
আসন বিন্যাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিন ফুট দূরত্ব বাধ্যতামূলক।
প্রতি ২০ জন পরীক্ষার্থীর জন্য একজন কক্ষ পরিদর্শক, তবে প্রতি কক্ষে অন্তত দুইজন।
পরীক্ষার ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
এইচএসসি ২০২৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ১৬ জুন সকাল ১১টায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। সারাদেশের বিভিন্ন বোর্ড অফিস ও জেলা সদরে একই সময় একযোগে অংশগ্রহণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় পরীক্ষা আয়োজন।
বাস্তবসম্মত সিলেবাস নির্ধারণ।
শ্রেণিকক্ষে যথাযথ পাঠদানের সুযোগ না থাকায় ক্ষতিপূরণমূলক ব্যবস্থা।
অনিশ্চয়তা ও অব্যবস্থাপনার অবসান।
এক শিক্ষার্থী বলেন, “২০২৩ সালের অক্টোবরে কলেজ শুরু হলেও ছয় মাস আমরা ফুল সিলেবাস অনুযায়ী পড়েছি। হঠাৎ শর্ট সিলেবাস আসায় মানসিকভাবে অস্থির হয়ে পড়েছি।” এর সাথে যুক্ত হয়েছে নির্বাচন, আন্দোলন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা, যার কারণে ৯ মাস ক্লাস কার্যত হয়নি।
২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসে আবারও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষা বোর্ড সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত না হলেও পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়াচ্ছে, উপসর্গ স্পষ্ট নয়।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়।
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবও চলমান।
ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এসএম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, “পরীক্ষা গ্রহণের পূর্ণ প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে, তবে পরিস্থিতি খারাপ হলে বিকল্প পরিকল্পনা রয়েছে।”
শিক্ষকরা বলছেন, নিজের কলেজে পরীক্ষা কেন্দ্র হওয়ায় ডিউটি করতেই হবে। কিন্তু স্বাস্থ্যঝুঁকি তাঁদের জন্য বাস্তব চ্যালেঞ্জ। পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে কেন্দ্রে আসে, ফলে সংক্রমণ রোধ কঠিন হয়ে পড়ে।
একজন শিক্ষক বলেন, “পরীক্ষার সময় ৩ ঘণ্টা হলেও আমাদের আসতে হয় অনেক আগে। স্বাস্থ্যবিধি মানা বাস্তবে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।”
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে সম্ভাব্য কিছু দিক হতে পারে:
পরীক্ষার সময় পিছিয়ে দেওয়া।
অনলাইনে বিকল্প মূল্যায়ন (কিন্তু বাস্তবায়ন কঠিন)।
পুনরায় সিলেবাস হালনাগাদ।
সেশনজট এড়াতে পরীক্ষার সময়সীমা সংক্ষিপ্ত রাখা।
যদি সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করে, তাহলে পরীক্ষা পেছানোর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
তবে কর্তৃপক্ষ চাইছে পরীক্ষা যথাসময়ে সম্পন্ন হোক। কারণ পরীক্ষা পেছানো মানেই বিশৃঙ্খলা ও সেশনজট, যা দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে।
স্বাস্থ্যঝুঁকি (Corona + Dengue):
সংক্রমণের হার বাড়ছে, নতুন ভ্যারিয়েন্টও ছড়াচ্ছে। পরীক্ষা হলে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও শিক্ষক এক জায়গায় আসবে— যা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে।
সঠিক প্রস্তুতির অভাব:
প্রায় ৯ মাস রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্দোলন, সিলেবাস পরিবর্তন— এর কারণে শিক্ষার্থীরা পুরোপুরি প্রস্তুতি নিতে পারেনি। এটা মানসিক চাপ এবং বৈষম্যের জন্ম দিচ্ছে।
ভবিষ্যতে হঠাৎ বন্ধ হলে আরও বিশৃঙ্খলা:
যদি পরীক্ষা চলার সময় সংক্রমণ তীব্র হয়, আর হঠাৎ বন্ধ করা হয়— সেটা শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বড় বিপর্যয় হবে। আগে থেকেই পরিকল্পিতভাবে স্থগিত হলে তা অনেক ভালো।
পরীক্ষা পেছানো = সময়ের অপচয়:
সেশনজট আরও বাড়বে। অনেকে ভর্তি, স্কলারশিপ, চাকরি এসবের জন্য পরীক্ষা শেষের অপেক্ষায় আছে।
বোর্ডের প্রস্তুতি শেষ:
প্রশ্নপত্র, কেন্দ্র, ইনভিজিলেটর সব প্রস্তুত। এখন পরীক্ষা বন্ধ করলে তা আর্থিক এবং প্রশাসনিক দিক থেকে ক্ষতিকর।
সবাইকে পরীক্ষা দিতে হবে — এটা সমান চাপ:
কেউই ভালোভাবে প্রস্তুতি নেয়নি। তাই একপ্রকার “লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড” তৈরি হয়েছে।
স্বাস্থ্য পরিস্থিতি মূল্যায়ন,
পরীক্ষার সময়সীমা সামঞ্জস্য,
এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক প্রস্তুতির সুযোগ তৈরি করা — এটা সবচেয়ে বাস্তবসম্মত ও মানবিক পদক্ষেপ হবে।
২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষা শুধুমাত্র একটি একাডেমিক মূল্যায়ন নয়, বরং এটি একটি জাতীয় ইভেন্ট যেখানে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জড়িত। স্বাস্থ্যঝুঁকি, প্রস্তুতির অভাব, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রশ্নপত্র নিরাপত্তা—এই সবকিছু মাথায় রেখে একটি সুপরিকল্পিত, নীতিনির্ধারিত এবং মানবিক পরীক্ষাব্যবস্থা সময়ের দাবি।
পরীক্ষা হোক—but be fair, be safe, be ready.
এটাই শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রত্যাশা।