শিরোনাম:
শিরোনাম:
🔍 Vivo X200 FE – গ্লোবাল মার্কেটে নতুন চমক, আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন ২৩ জুন! Vivo iQOO Z10 Lite – বাজেট ফাইভজি স্মার্টফোনে দুর্দান্ত ব্যাটারি ও পারফরম্যান্স Samsung Galaxy Z Flip7 – প্রিমিয়াম ফোল্ডেবল স্মার্টফোনের নতুন সংজ্ঞা Xiaomi Poco F7: ফ্ল্যাগশিপ পারফরম্যান্সে নতুন রাজা আসছে বাজেটের ভেতরেই! OnePlus Nord CE5: আসছে দুর্দান্ত ব্যাটারি ও শক্তিশালী পারফরম্যান্সসহ নতুন স্মার্টফোন! কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সামাজিক পরিবর্তন: প্রযুক্তির উত্থানে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য, নীতি ও নেতৃত্বের রূপান্তর GTA Online: ‘Money Fronts’ আপডেট নিয়ে ফিরছে অপরাধ জগতের নতুন অধ্যায় ২০২৫ সালের এইচএসসি: পরীক্ষার্থীদের জন্য বিপদ না বাঁচার সুযোগ ইন্টার মায়ামি ফুটবল ক্লাব – ২০২৫ সালের দল, ইতিহাস ও সাফল্য বিশ্লেষণ ৭টি কারণ কেন আপনি Scale AI ব্যবহার করবেন (এবং কবে করবেন না)

জুনে বাংলাদেশে আসছে ১০০ চীনা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি

মো : সবুজ মিয়া
সময় : মঙ্গলবার, মে ২৭, ২০২৫

বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগকারীদের আগমন: দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত

আগামী জুন মাসের প্রথম সপ্তাহেই বাংলাদেশে চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক এক নতুন মাইলফলকে পৌঁছাতে যাচ্ছে। চীন থেকে প্রায় ১০০টি কোম্পানির ২৫০ জন বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এই সফরের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো—বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা পর্যবেক্ষণ এবং দেশটির অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সরাসরি মূল্যায়ন করা।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সম্প্রতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে। বেজা জানিয়েছে, ১ জুন ঢাকায় আয়োজিত হতে যাচ্ছে দিনব্যাপী ‘চীন-বাংলাদেশ ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্মেলন’। এই সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থাকবেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চীনা কোম্পানিগুলোর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এবং চীনের বিভিন্ন চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধিরা।

এই সম্মেলনের মাধ্যমে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব আরও গভীর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। পাশাপাশি বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও-এর।

বাংলাদেশ ও চীনের সরকারের যৌথ উদ্যোগে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আয়োজনটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কাজ করছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বেজা। অপরদিকে, চীনের পক্ষ থেকে উদ্যোগে সমর্থন দিচ্ছে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা দূতাবাস।

আয়োজকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই সম্মেলনে চীনের যে ১০০টি কোম্পানি অংশ নিচ্ছে, তাদের মধ্যে অন্তত ছয় থেকে সাতটি প্রতিষ্ঠান ‘ফরচুন ৫০০’ তালিকাভুক্ত। ফলে সম্মেলনটি শুধু কূটনৈতিক দিক থেকে নয়, বরং আর্থিকভাবে বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি বড় সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সফর এবং সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি দেশের শিল্পায়ন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সহায়ক হবে। বিশেষ করে, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও রপ্তানিমুখী শিল্পখাতে চীনা বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে সহযোগিতার সুযোগ তৈরি করতে পারে।

বেজা আরও জানিয়েছে, চীনা বিনিয়োগকারীদের এ সফরকে শুধুই একটি সম্মেলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হবে না। বরং, তাদেরকে দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও সম্ভাবনাময় শিল্পাঞ্চল পরিদর্শনের সুযোগ করে দেওয়া হবে। এই সফরের মধ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের অবকাঠামো, শ্রমশক্তি, নীতিগত সহায়তা এবং বাজার কাঠামো সরাসরি দেখতে পাবেন।

এই উদ্যোগটি মূলত অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের এক গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল। গত এপ্রিল মাসে তাঁর নেতৃত্বে চীন সফরে গিয়ে বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ও বিনিয়োগ ফোরামে অংশগ্রহণের পরপরই এই সম্মেলনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। তখন থেকেই উভয় দেশের নীতিনির্ধারকরা যৌথভাবে সম্মেলনের প্রস্তুতিতে কাজ শুরু করেন।

বিশ্বায়নের এই যুগে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর প্রেক্ষাপটে এই সম্মেলন অত্যন্ত সময়োপযোগী। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই অবকাঠামো উন্নয়ন, শিল্প স্থাপন এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। বিশেষ করে, পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেলসহ একাধিক বড় প্রকল্পে চীনা সহযোগিতার নজির রয়েছে।

চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আগমনের পেছনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এবং দক্ষিণ এশিয়ার সম্ভাবনাময় বাজারে প্রবেশের কৌশল। বাংলাদেশ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)-এর একটি অংশ, এবং এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব বিস্তারে বাংলাদেশ একটি কৌশলগত অংশীদার।

চীন এমন একটি দেশ, যারা নিজেদের পণ্য ও প্রযুক্তিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দিতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকে। বাংলাদেশের মতো শ্রমঘন ও বাজারমুখী অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করলে, চীনা কোম্পানিগুলোও নিজস্ব উৎপাদন খরচ কমিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে পারবে।

বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকরা আশা করছেন, এই সম্মেলনের মাধ্যমে চীন থেকে উল্লেখযোগ্য সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (FDI) আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে। এতে করে দেশের কর্মসংস্থান বাড়বে, প্রযুক্তির স্থানান্তর ঘটবে এবং রপ্তানি আয়ও বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো আরও কার্যকর হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের উদ্যোগে শুধুই বিনিয়োগ নয়, বরং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একটি আস্থা ও স্থিতিশীলতার বার্তা পৌঁছে যায়। এতে ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে আরও বৃহত্তর বাণিজ্য ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার পথ খুলে যেতে পারে।

উল্লেখ্য, বেজা ও বিডা ইতোমধ্যেই চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য একাধিক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দ এবং নীতিগত সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ট্যাক্স হলিডে, শতভাগ রপ্তানি সুবিধা, সহজ লিজ ব্যবস্থা, এবং এক জানালা সেবা (one stop service)।

চীন ও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক গত এক দশকে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক দেশ। বাংলাদেশে চীনা পণ্যের চাহিদা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাংলাদেশের পোশাকসহ বিভিন্ন খাতেও চীনের বাজার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

এই পটভূমিতে অনুষ্ঠিতব্য চীন-বাংলাদেশ ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্মেলন উভয় দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই সম্মেলন শুধু বিনিয়োগের কথা বলবে না, বরং উভয় দেশের উদ্যোক্তাদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন, প্রকল্প পরিদর্শন ও সম্ভাব্য চুক্তির পথও খুলে দেবে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, চীনা বিনিয়োগকারীদের এই সফর এবং সম্মেলন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। এটি দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্যও অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে, যাদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের বিনিয়োগ, প্রযুক্তি এবং ব্যবসায়িক জ্ঞান অর্জনের দ্বার উন্মুক্ত হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

Tags

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গণতন্ত্র গ্রেপ্তার ১২ চট্টগ্রাম ছাত্র আন্দোলন জাতীয় নির্বাচন জাতীয় ঐক্য ড. ইউনূস ড. মুহাম্মদ ইউনূস তারেক রহমান ত্রিশাল দুর্নীতি নাহিদ ইসলাম নির্বাচন নির্বাচন কমিশন পাকিস্তান প্রধান উপদেষ্টা প্রশাসনিক সংস্কার ফিলিস্তিন বাংলাদেশ বাংলাদেশ অর্থনীতি বাংলাদেশ নির্বাচন বাংলাদেশ ফুটবল বাংলাদেশ রাজনীতি বিএনপি ভারত ময়মনসিংহ মানবাধিকার মুহাম্মদ ইউনূস রাজনীতি রাজনৈতিক ঐক্য রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক সংলাপ শেখ হাসিনা সংবিধান সচিবালয় সিঙ্গাপুর বনাম বাংলাদেশ সিলেটে কারফিউর মধ্যেও থেমে নেই চিনি চোরাচালান সুশাসন সেনাবাহিনী ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়াল খেলাপি ঋণের পরিমাণ

পুরাতন খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!